ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণপিটুনি খেলেন ঢাবি হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
  • ৭৩ বার

রাজধানীর পলাশী বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দোকানিদের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান এবং তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম। রোববার রাত ১১টার দিকে পলাশী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়ায় চাপাতি দিয়ে নজরুল এবং মাহবুব নামে দুই ব্যবসায়ীকে মারতে গেলে দোকানিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চকবাজার থানায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

দোকানিরা জানান, প্রায় প্রত্যেকদিন চাঁদাবাজি করতে আসে সলিমুল্লাহ হল ছাত্রলীগের এই সাবেক সভাপতি ও তার সহযোগী শহিদুল। এর আগে পলাশী বাজারের কলা বিক্রেতা দেলোয়ার থেকে এক হাজার টাকা এবং কনফেকশনারি দোকানের মালিক সানাউল্লাহ থেকে টাকা চাঁদা নেয়। এছাড়া প্রত্যেকদিন তারা এ বাজারে চাঁদাবাজি করে বলে জানান একাধিক দোকান মালিক।

পলাশী দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বলেন, রাত ১১টার দিকে এসে এই ছাত্রলীগ নেতা আমাদের দোকানিদের থেকে চাঁদা দাবি করে। তাকে বাধা দিলে তিনি নজরুল নামে এক ব্যবসায়ী মারধর করে এবং চাপাতি দিয়ে কোপাতে যান, পরে ওই ব্যবসায়ী পালিয়ে গেলে আমাকে চাপাতি দিয়ে মারতে আসে। আশেপাশে থাকা দোকানিরা আমাকে উদ্ধার করে এবং তাদের ধরে ফেলে। তারপর সবাই মিলে গণপিটুনি দেয়। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে নিয়ে যায়।

আরেক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁদা চাইতে আসলে আমরা তাকে বাধা দিই। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম আমাকে ঘুসি মারেন এবং পরবর্তীতে চাপাতি নিয়ে আসে কিন্তু আমি সরে যাই। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত অত্যাচার এবং চাঁদাবাজি করেন তারা।

পলাশী বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ বলেন, এরা দুজন নিয়মিত চাঁদাবাজি করতে আসেন বাজারে। আমরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারি না। আজকে মারতে আসলে আমরা সবাই ধরে তাদের গণপিটুনি দিই এবং পুলিশের হাতে তুলে দিই। আমরা এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, একজন সাবেক শিক্ষার্থীকে মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ধরে রেখেছে বলে আমরা শুনেছি। তাকে পুলিশে দিয়েছে সেটা মাত্র শুনলাম। যেহেতু সে হলে থাকে তাহলে সেটা হল প্রশাসন দেখবে। বর্তমানে সে যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থী না, তাই আমাদের এখানে কোনো দায় নেই। ফলে বিধি অনুযায়ী তাকে কোনো শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে না। সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

মেহেদীর হলে থাকার প্রসঙ্গে সলিমুল্লা মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো.  ইকবাল রউফ মামুন বলেন, সে অবৈধভাবে হলে থাকে। আমরা তাকে আগে চিহ্নিত করতে পারলে আগেই হল থেকে বের করে দিতাম। এখন একজন সাবেক ছাত্রের দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় বা হল নেবে না।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে সলিমুল্লাহ হল থেকে মাদক এবং নারীসহ আটক হন এই নেতা। সে সময় হল প্রশাসন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেয়। এর আগে ২০১৪ সালে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগ। মদের বারে মারামারি করার কারণেই তাকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি। তিনি মাদক ব্যবসার জড়িত বলেও জানা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গণপিটুনি খেলেন ঢাবি হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি

আপডেট টাইম : ১০:৫১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

রাজধানীর পলাশী বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দোকানিদের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান এবং তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম। রোববার রাত ১১টার দিকে পলাশী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়ায় চাপাতি দিয়ে নজরুল এবং মাহবুব নামে দুই ব্যবসায়ীকে মারতে গেলে দোকানিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চকবাজার থানায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

দোকানিরা জানান, প্রায় প্রত্যেকদিন চাঁদাবাজি করতে আসে সলিমুল্লাহ হল ছাত্রলীগের এই সাবেক সভাপতি ও তার সহযোগী শহিদুল। এর আগে পলাশী বাজারের কলা বিক্রেতা দেলোয়ার থেকে এক হাজার টাকা এবং কনফেকশনারি দোকানের মালিক সানাউল্লাহ থেকে টাকা চাঁদা নেয়। এছাড়া প্রত্যেকদিন তারা এ বাজারে চাঁদাবাজি করে বলে জানান একাধিক দোকান মালিক।

পলাশী দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বলেন, রাত ১১টার দিকে এসে এই ছাত্রলীগ নেতা আমাদের দোকানিদের থেকে চাঁদা দাবি করে। তাকে বাধা দিলে তিনি নজরুল নামে এক ব্যবসায়ী মারধর করে এবং চাপাতি দিয়ে কোপাতে যান, পরে ওই ব্যবসায়ী পালিয়ে গেলে আমাকে চাপাতি দিয়ে মারতে আসে। আশেপাশে থাকা দোকানিরা আমাকে উদ্ধার করে এবং তাদের ধরে ফেলে। তারপর সবাই মিলে গণপিটুনি দেয়। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে নিয়ে যায়।

আরেক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁদা চাইতে আসলে আমরা তাকে বাধা দিই। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম আমাকে ঘুসি মারেন এবং পরবর্তীতে চাপাতি নিয়ে আসে কিন্তু আমি সরে যাই। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত অত্যাচার এবং চাঁদাবাজি করেন তারা।

পলাশী বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ বলেন, এরা দুজন নিয়মিত চাঁদাবাজি করতে আসেন বাজারে। আমরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারি না। আজকে মারতে আসলে আমরা সবাই ধরে তাদের গণপিটুনি দিই এবং পুলিশের হাতে তুলে দিই। আমরা এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, একজন সাবেক শিক্ষার্থীকে মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ধরে রেখেছে বলে আমরা শুনেছি। তাকে পুলিশে দিয়েছে সেটা মাত্র শুনলাম। যেহেতু সে হলে থাকে তাহলে সেটা হল প্রশাসন দেখবে। বর্তমানে সে যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থী না, তাই আমাদের এখানে কোনো দায় নেই। ফলে বিধি অনুযায়ী তাকে কোনো শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে না। সরকারের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

মেহেদীর হলে থাকার প্রসঙ্গে সলিমুল্লা মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো.  ইকবাল রউফ মামুন বলেন, সে অবৈধভাবে হলে থাকে। আমরা তাকে আগে চিহ্নিত করতে পারলে আগেই হল থেকে বের করে দিতাম। এখন একজন সাবেক ছাত্রের দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় বা হল নেবে না।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে সলিমুল্লাহ হল থেকে মাদক এবং নারীসহ আটক হন এই নেতা। সে সময় হল প্রশাসন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেয়। এর আগে ২০১৪ সালে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগ। মদের বারে মারামারি করার কারণেই তাকে অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি। তিনি মাদক ব্যবসার জড়িত বলেও জানা যায়।