বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ লাখেরও বেশি শিক্ষকপদ শূন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। শিক্ষার স্বাভাবিক গতি আনতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাকিয়ে আছে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) দিকে। কিন্তু ‘বিধিমালার নানা বেড়াজালে’ নিয়োগপ্রক্রিয়া এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এছাড়া কয়েক লাখ নিবন্ধনসনদধারী থাকলেও আবেদনের সুযোগ পায়নি। ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষেও শিক্ষকসংকট থেকেই যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের মেধাক্রম তৈরি করে এনটিআরসিএ। এরপর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। ঐ গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে এই মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে কে কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের যোগ্য, তা নির্ধারণ করে দেয় এই সংস্থা।
এ পর্যন্ত ১৮টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন করেছে। গত সপ্তাহে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে স্কুল ও কলেজপর্যায় মিলিয়ে পাশ করেছেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন।
গত সপ্তাহে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশিত হয়েছে। সনদের মেয়াদের কারণে এই গণবিজ্ঞপ্তিতে ১ থেকে ১৫তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেনি। ফলে কয়েক লাখ নিবন্ধনসনদধারী থাকলেও ১ লাখ পদের বিপরীতে আবেদন করতে পেরেছে মাত্র ২৪ হাজার প্রার্থী। এই আবেদনকারীদের মধ্যে থেকেও অনেকে নানা কারণে বাদ পড়বেন। এ কারণে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হলেও বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ থেকেই যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন মাঠপর্যায় থেকে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়, তখন এর সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। এই সময়ে আরও বেড়েছে; যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
জমির উদ্দিনসহ একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, ‘আমরা ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে পাশ করি কিন্তু বয়স ৩৫ শেষ হয়েছে। যখন আবেদন করি, তখন আমাদের বয়স নিয়ম অনুযায়ী ছিল। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের সার্কুলার ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারিতে প্রকাশ হয়। কিন্তু করোনা ও এনটিআরসিএর সিদ্ধান্তহীনতায় এই পরীক্ষা আয়োজন শেষ করতে চার বছরের বেশি সময় প্রয়োজন হয়। সর্বশেষ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ইতিমধ্যে এই নিবন্ধনে উত্তীর্ণ ৭৩৯ জনের চাকরিপ্রার্থীর ৩৫ বছর বয়স শেষ হয়েছে। যে কারণে পঞ্চম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আমরা আবেদন করতে পারিনি। আর দায় তো আমাদের নয়।’
মিজানুর রহমান নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘কয়েক লাখ নিবন্ধনসনদধারী রয়েছে, যাদের শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার এই সংস্থাটি এমন নিয়ম করেছে, যাতে যোগ্য প্রার্থীরাও অযোগ্য হয়ে গেছে। এবারের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেননি।’ তিনি জানান, শূন্যপদের বিবেচনায় আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলে বেকাররা চাকরি পেত, পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকসংকটও থাকত না। কিন্তু সেটা না করে লাখ লাখ বেকারের বিপদে ফেলে দিলো এনটিআরসিএ।
এনামুল হক নামে এক প্রার্থী বলেন, লাখের মতো শিক্ষকপদ শূন্য থাকলেও এবার ১ থেকে ১৫তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ কাউকে আবেদন করতে দেয়নি। ১৭তম নিবন্ধনধারীদের একটা অংশ চার বছরে ৩৫ বছরের বেশি বয়স হয়ে গেছে, তাদেরও আবেদন করতে দেওয়া হয়নি। এত শিক্ষকসংকট কিন্তু ২০২০ থেকে ২০২৪; এক বছরের পরীক্ষা শেষ করতে চার বছর লেগেছে।
এর আগে এনটিআরসিএয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘১৮তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই আগের বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে প্রার্থী আরো কমে গেছে। অনেক পদ শূন্য থাকলেও প্রার্থী কম থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছুই নেই।’
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। ঐ সময়ও মাত্র ২৭ হাজার ৭৪ জন নিয়োগ পেয়েছিলেন। বাকি সব পদ শূন্য ছিল।
এদিকে এই গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে না পারা প্রার্থীরা আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।