২০১৪ সালের ২৬ জুন। নানা কারণে বিতর্কিত গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকিরকে।
ওই বছরের ২ নভেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক ড. সামিউল আলম লিটন নিজের ফেসবুকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিধূভূষণ দাসের মিষ্টিমুখের ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন।
স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘গৌরীপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান ফকিরকে অব্যাহতি দেয়ার পর সেক্রেটারি বাবু বিধূভূষণ দাস মিষ্টি খাচ্ছেন।’
সেই বিধূভূষণ দাস ভোল পাল্টেছেন। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য ফকিরের লাগামহীন কথাবার্তা, প্রতিপক্ষকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া কিংবা দিগম্বর করা, ক্যাডার বেষ্টিত হয়ে চলাফেরা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের নাভিশ্বাস উঠলেও আমূল বদলে যাওয়া বিধূভূষণ মনে করেন ঠিক উল্টো।
তার ভাষ্যমতে, এসব নেতিবাচক ঘটনা বিভিন্ন কারণে সাবেক মন্ত্রী সাহেব আগে ঘটিয়েছেন। এখন আর এইসব করেন না তিনি। তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
অথচ সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতির পর তারই বরাত দিয়েই মাইকিং হয়েছিল গোটা উপজেলায়। আর বিধূবাবু বলেছিলেন, এমপি’র কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই সবার সম্মতিক্রমে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’
সুবিধাবাদী রাজনীতির টানে বিধূভূষণ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করলেও এমপি ফকিরের ৮০ স্কোয়াড বাহিনীর তাণ্ডব চলছে গোটা উপজেলা জুড়ে। আর সংসদ সদস্যের দাম্ভিক মনোভাব, দলীয় নেতাকর্মীদের হেনস্থা ও জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত হুমকির ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে চায়ের টেবিল থেকে ফেসবুকে।
মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফকিরের ৮০ স্কোয়াড বাহিনীর সর্দার ইকবাল হোসেন আজাদ লিটনসহ ৬ ক্যাডারকে ক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনির ঘটনা হয়ে উঠে ‘টক অব দ্য গৌরীপুর।’ তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয় গৌরীপুর ছাপিয়ে রাজনৈতিক সূতিকাগার ময়মনসিংহ শহরেও।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমেও ‘আ’লীগ এমপি’র ক্যাডারদের গণপিটুনি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলপাড় সৃষ্টি করে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গৌরীপুর পাইলট গার্লস হাইস্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী পপি আকতার নামে একজন নাতিদীর্ঘ স্ট্যাটাস লিখেছেন ফেসবুক ওয়ালে। তিনি লিখেছেন, ‘ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমান ফকির (এমপি) সাধারণ মানুষদের অপমান অপদস্ত থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ করেননি যা করার বাদ আছে। তিনি অধ্যাপক ফরিদ স্যারকে পর্যন্ত দিগম্বর করেছেন।
আরো লিখেন, ‘অধ্যাপক ফরিদ স্যারকে দিগম্বর করার পর গৌরীপুরের আমজনতা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে তিনি গৌরীপুরে আসেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় লোকজন কথা বললে ধরে এনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হয়রানির ভয়ে ভোট ব্যাংকখ্যাত গৌরীপুর এখন আওয়ামী লীগ শূন্য হয়ে পড়েছে। বারবার জেলা আওয়ামী লীগকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফকির ১২ দিন ক্ষমতায় থাকা মানে গৌরীপুরবাসী একযুগ পিছিয়ে পড়া।’
এ স্ট্যাটাসেই একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ও নিজেই এখন দিগম্বর অইবো। পাপ না কী বাপরেও ছাড়ে না।’
আর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাসেল পাঠান মন্তব্য করেছেন ঠিক এমন, ‘অন্যায় করলে তার শাস্তি ভোগ করতে হবেই। একটা কথা মনে রাখতে হবে ক্ষমতা চিরদিন থাকে না।’
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুজিবুর রহমান ফকিরের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।