ঢাকা ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে যেভাবে হতে পারে সরকার গঠন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৩৬ বার

পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রাপ্ত ফলে জটিল এক সমীকরণে আটকে গেছে সরকার গঠনের হিসাব। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অনুগত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু কোনো দলের হয়ে নির্বাচন না করায় তারা সরকার গঠন করতে পারছে না। আবার দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তারাও সরকার গঠন করতে পারছে না। অন্য দলের সঙ্গে জোট করতে গেলে সমস্যা হচ্ছে- কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৬০ ঘণ্টা পর প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১০২টি আসন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৪টি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি। এ ছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্য দলগুলো পেয়েছে ১৭টি আসন। পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৪ আসন। কিন্তু কোনো দলই এই সংখ্যায় না পৌঁছানোয় এখন জোট সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা।

পাকিস্তান অনেকদিন ধরেই অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক বৈরিতা ও জঙ্গি সহিংসতায় জর্জরিত। এমন অবস্থায় কারা সরকার গঠন করবে সেদিকে তাকিয়ে আছে দেশটির সাধারণ মানুষ। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক ফল অনুসারে যেহেতু কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, ফলে জোট সরকার গঠনই একমাত্র পথ।

এরইমধ্যে জোট গঠনের জন্য আলোচনায় বসেছে পিপিপি ও পিএমএল-এন। পিপিপির দাবি, বিলাওয়াল ভুট্টকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তবে পিএমএল-এন এই দাবি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী হতে হবে তাদের দল থেকেই। এমন অবস্থায় পাঁচ বছরের মেয়াদে দুই পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা করেছেন নেতারা।

এর আগে ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে দুইজন মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর করে দায়িত্বভাগ করে নিয়েছিলেন। সেই ফর্মুলাতেই নওয়াজ শরীফরা এগোতে চাইছেন বলে জিও নিউজকে জানিয়েছে একটি সূত্র। গতকাল রবিবার এক বৈঠকে দুই দলের নেতারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরে গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা একমত হয়েছেন যে, দেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করতে হবে।

বৈঠকে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও পার্লামেন্টারি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং পিএমএল-এন শেহবাজ শরীফ উপস্থিত ছিলেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তারা বৈঠক করেছেন এবং দেশের স্বার্থরক্ষায় তারা বদ্ধ পরিকর।

জোট সরকার গঠনের শর্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ও চায় পিপিপি। এই দুই দলসহ আরও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গড়ে তোলা পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) চাওয়ার মুখেই ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। পিডিএম পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান। এরপর পিডিএমই সরকার গঠন করেছিল। সেই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেহবাজ শরিফ আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেছিলেন বিলাওয়াল। এবার প্রধানমন্ত্রী পদ চান বিলাওয়াল। তবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি পিএমএল-এন।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট পেয়েও প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই আলোচনায় নেই ইমরান খানের পিটিআই। পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর আলী খানের দাবি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার দলকে কেন্দ্র সরকার গঠনের সুযোগ দেবেন। কারণ তাদের নির্বাচিত প্রার্থীরা সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে লড়া পিটিআই প্রার্থীদের সরকার গঠন করতে হলে অবশ্যই কোনো না কোনো দলের অধীনে থাকতে হবে। আর জোটও গঠন করতে হবে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও একক সরকার গঠনের সুযোগ নেই তাদের। তাই পূর্ববর্তী জরিপগুলোতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই ইমরান খানের।

এ ছাড়া ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজ শরীফের দলে যোগ দিয়েছেন। পাকিস্তানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদে থাকতে পারেন। আবার তাদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের ক্ষেত্রে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ কাকার। তিনি বলেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়েকটি কারণে রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকে। প্রথমত, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে, দ্বিতীয়ত, নিজেকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং সবশেষে পার্লামেন্টে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। তবে বিজয়ী হওয়ার পর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাতে তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে- যে সময়ের মধ্যে তাদের কোন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানে যেভাবে হতে পারে সরকার গঠন

আপডেট টাইম : ১১:২৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রাপ্ত ফলে জটিল এক সমীকরণে আটকে গেছে সরকার গঠনের হিসাব। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অনুগত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু কোনো দলের হয়ে নির্বাচন না করায় তারা সরকার গঠন করতে পারছে না। আবার দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তারাও সরকার গঠন করতে পারছে না। অন্য দলের সঙ্গে জোট করতে গেলে সমস্যা হচ্ছে- কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৬০ ঘণ্টা পর প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১০২টি আসন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৪টি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি। এ ছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্য দলগুলো পেয়েছে ১৭টি আসন। পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৪ আসন। কিন্তু কোনো দলই এই সংখ্যায় না পৌঁছানোয় এখন জোট সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা।

পাকিস্তান অনেকদিন ধরেই অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক বৈরিতা ও জঙ্গি সহিংসতায় জর্জরিত। এমন অবস্থায় কারা সরকার গঠন করবে সেদিকে তাকিয়ে আছে দেশটির সাধারণ মানুষ। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক ফল অনুসারে যেহেতু কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, ফলে জোট সরকার গঠনই একমাত্র পথ।

এরইমধ্যে জোট গঠনের জন্য আলোচনায় বসেছে পিপিপি ও পিএমএল-এন। পিপিপির দাবি, বিলাওয়াল ভুট্টকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তবে পিএমএল-এন এই দাবি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী হতে হবে তাদের দল থেকেই। এমন অবস্থায় পাঁচ বছরের মেয়াদে দুই পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা করেছেন নেতারা।

এর আগে ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে দুইজন মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর করে দায়িত্বভাগ করে নিয়েছিলেন। সেই ফর্মুলাতেই নওয়াজ শরীফরা এগোতে চাইছেন বলে জিও নিউজকে জানিয়েছে একটি সূত্র। গতকাল রবিবার এক বৈঠকে দুই দলের নেতারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরে গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা একমত হয়েছেন যে, দেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করতে হবে।

বৈঠকে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও পার্লামেন্টারি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং পিএমএল-এন শেহবাজ শরীফ উপস্থিত ছিলেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তারা বৈঠক করেছেন এবং দেশের স্বার্থরক্ষায় তারা বদ্ধ পরিকর।

জোট সরকার গঠনের শর্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ও চায় পিপিপি। এই দুই দলসহ আরও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গড়ে তোলা পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) চাওয়ার মুখেই ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। পিডিএম পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান। এরপর পিডিএমই সরকার গঠন করেছিল। সেই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেহবাজ শরিফ আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেছিলেন বিলাওয়াল। এবার প্রধানমন্ত্রী পদ চান বিলাওয়াল। তবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি পিএমএল-এন।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট পেয়েও প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই আলোচনায় নেই ইমরান খানের পিটিআই। পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর আলী খানের দাবি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার দলকে কেন্দ্র সরকার গঠনের সুযোগ দেবেন। কারণ তাদের নির্বাচিত প্রার্থীরা সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে লড়া পিটিআই প্রার্থীদের সরকার গঠন করতে হলে অবশ্যই কোনো না কোনো দলের অধীনে থাকতে হবে। আর জোটও গঠন করতে হবে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও একক সরকার গঠনের সুযোগ নেই তাদের। তাই পূর্ববর্তী জরিপগুলোতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই ইমরান খানের।

এ ছাড়া ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজ শরীফের দলে যোগ দিয়েছেন। পাকিস্তানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদে থাকতে পারেন। আবার তাদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের ক্ষেত্রে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ কাকার। তিনি বলেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়েকটি কারণে রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকে। প্রথমত, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে, দ্বিতীয়ত, নিজেকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং সবশেষে পার্লামেন্টে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। তবে বিজয়ী হওয়ার পর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাতে তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে- যে সময়ের মধ্যে তাদের কোন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।