পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের সব আসনের ফল জানতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬০ ঘণ্টা। ফল ঘোষণার পর দেখা গেল, সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দলই। ফলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। শুক্রবার ভোর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা শুরু করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ৬০ ঘণ্টা আসে সব আসনের ফল। এতে দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১০২টি আসন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৪টি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি। এ ছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্য দলগুলো পেয়েছে ১৭টি আসন।
পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৪ আসন। কিন্তু কোনো দলই এই সংখ্যায় না পৌঁছানোয় এখন জোট সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা।
ইতিমধ্যে পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে পিপিপি। তাদের দাবি, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়ার ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। পিএমএলএন সভাপতি শেহবাজ শরীফ বলেছেন, এই শর্ত মানলে পাঞ্জাবে সরকার গঠনে তাদের সহযোগিতা করবে পিপিপি।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেহবাজ শরীফ নিজেই সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও বিলাওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনা করেছেন। উপস্থিত ছিলেন দুই দলের সিনিয়র নেতারাও।
জানা গেছে, পিপিপির সঙ্গে তাদের এই সংলাপ ব্যর্থ হলে এমকিউএম, জেইউআই-এফের সঙ্গে জোট করবে পিএমএল-এন। কারণ তারা প্রধানমন্ত্রী পদ নিজেদের দলের কাউকে রাখতে চায়। তাদের পরিকল্পনা, শেহবাজ শরীফ হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং মরিয়ম নওয়াজ হবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে ইমরান খানের দল পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর আলী খানের দাবি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার দলকে কেন্দ্রে সরকার গঠনের সুযোগ দেবেন। কারণ তাদের নির্বাচিত প্রার্থীরা সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হয়েছেন।
স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে লড়া পিটিআই প্রার্থীদের সরকার গঠন করতে হলে অবশ্যই কোনো না কোনো দলের অধীনে থাকতে হবে। আর জোটও গঠন করতে হবে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও একক সরকার গঠনের সুযোগ নেই তাদের।
সেক্ষেত্রে এগিয়ে আছে পিএমএল-এন। দল হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তাই অন্য দলের সমর্থন নেওয়ার জন্য দৌঁড়ঝাপ করছেন দলটির নেতারা। গতকাল শনিবারও তারা একাধিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শেহবাজ শরীফ জানান, পার্টির প্রধান নওয়াজ শরীফের নির্দেশনা মেনেই তারা এগোচ্ছেন।
তবে পিপিপির দাবি, তাদের সমর্থন ছাড়া কোনো দলই কেন্দ্র কিংবা পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে সরকার গঠন করতে পারবে না। আলোচনার জন্য তাদের দরজা খোলা রয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমধান চান।
পিপিপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা এখনো কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেননি। তারা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। পিপিপির সমর্থন ছাড়া কোনো প্রাদেশিক সরকার গঠন হবে না। কারণ একমাত্র পিপিপিই চারটি প্রদেশেই আসন পেয়েছে।
সবমিলে পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।