গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইসরায়েল। কারণ, ওই দিন ইসরায়েলের শক্তিশালী গোয়েন্দা বিভাগ ও সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে নজিরবিহীন অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক গোষ্ঠী হামাস।
ওই দিন ইসরায়েলে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। আহত হয় দুই হাজারেরও বেশি। এছাড়াও আড়াই শতাধিক মানুষকে ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। হামাসের এই কর্মকাণ্ডে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
হামাসের ওই হামলার জবাবে অবিলম্বে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। তারা ঘোষণা দেয়, হামাসকে নির্মূল করা ও জিম্মিদের উদ্ধার করা এই যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু দীর্ঘ চার মাসেও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি ইসরায়েল।
বরং এখনও গাজায় স্থল অভিযানে হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে নাস্তানাবুদ হচ্ছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। শুধু তাই নয়, আকাশপথেও গাজা থেকে ইসরায়েলে আঘাত হানতে রকেট সক্ষমতাও দেখিয়ে যাচ্ছে হামাস।
তবে গাজার চেয়েও ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক দেশটির সর্ব উত্তরের মেতুলা সীমান্ত। তিন দিক থেকে লেবানন বেষ্টিত এ শহরটি একরকম নিঃসঙ্গভাবে পাহারা দিচ্ছে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা। অর্থাৎ ইসরায়েলের এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হুমকি ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেতুলা সীমান্তের এক সীমান্তরক্ষী তার আঙ্গুল দিয়ে হিজবুল্লাহর অবস্থান নির্দেশ করছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, আমরা তিন দিক থেকে হিজবুল্লাহর নজরে রয়েছি এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত পাহারা দিচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সীমান্তরক্ষীর বরাতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই শহরটি পশ্চিমে এক চুতার্থাংশ, উত্তরে আধা মাইল এবং পূবে আধা মাইল লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নজরে রয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই দেশটির মেতুলা সীমান্তে সৈন্য জমায়েত করে হিজবুল্লাহ। পরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল। তবে এই সীমান্তে চূড়ান্ত যুদ্ধের পক্ষে নন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কারণ এ অঞ্চলের সীমান্তরক্ষীরা জানেন হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো মানে তাদের এখানে বৃহৎ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সীমান্তরক্ষী জানিয়েছেন, আমরা জানি হিজবুল্লাহ হামাসের চেয়ে বেশ আধুনিক এবং শক্তিশালী বাহিনী। হামাসের চেয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বেশি। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের পক্ষে লড়াই করে আসছে।
এছাড়া হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া ওয়াশিংটনেরও মাথা ব্যাথার কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হামাস-ইসরায়েল সংঘাত যদি আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এই যুদ্ধে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই মেতুলা সীমান্তে ইসরায়েলের জন্য হিজবুল্লাহ বড় ধরনের বিপদ বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি