ঢাকা ১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুলশান থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০১৬
  • ২৭৬ বার

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়, বনানীর জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া থেকে সরিয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ মিছিল ও ঘেরাও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হচ্ছে।

এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কূটনৈতিক এলাকাকে একটি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কার্যালয় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কূটনৈতিক এলাকাকে একটি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গুলশান থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং বনানী থেকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরাতে হবে। তবে তাঁদের কার্যালয়ের কারণে এই এলাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন না দুই দলের নেতারা। এ ছাড়া এখানে শাসক দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ছোট ছোট একাধিক কার্যালয় আছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের ডিসি ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়াসহ কূটনৈতিক এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয় রয়েছে। কার্যালয় থাকায় ওই এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের আনাগোনা থাকে। মিছিল-মিটিংসহ মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ের ঘটনাও ঘটে। চিঠিতে ৮ জানুয়ারি কানাডীয় হাইকমিশনের পাশে, ২৫ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের গ্যারেজের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল হামলায় ১৮ জন আহত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি গুলশান-২-এর মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক বহনকারী গাড়ির ছাদে ককটেল বিস্ফোরিত হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়।

ইতোমধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গুলশানের সব বাণিজ্যিক ভবন, রাজনৈতিক কার্যালয় ও অন্যান্য অবৈধ ভবনের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ও।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘আমার এলাকায় ছোটখাট যে সব রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল তা উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন তা আমরা করব।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুলশান এলাকার সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেন নতুনভাবে কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। গুলশান ও বনানীতে সরকারিভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কড়াইল ও সাততলা বস্তি উচ্ছেদ করে আধুনিক আবাসন গড়ে তোলা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব রাজনৈতিক কার্যালয়, বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ অন্যান্য স্কুল, কলেজ সরিয়ে নেওয়ার কথা বলে আসছি। সম্প্রতি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঘটনার পর আবার বিষয়টি জোরালোভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনাই গুলশান থেকে সরিয়ে নেব।’

এদিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির কার্যালয়ের কারণে গুলশানে কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না; বরং রাজনৈতিক উন্মেষে এ কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে আমি মনে করি। সরকার অনেক দিন ধরেই এ কার্যালয় সরিয়ে দিতে চাইছে।’

তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা আমরা মেনে নেব। তবে আমি মনে করি, প্রথম থেকেই আবাসিক এলাকায় এসব স্কুল, কলেজ, রাজনৈতিক কার্যালয় বা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা উচিত হয়নি। তবে আমি মনে করি না জাতীয় পার্টির কার্যালয় বনানীতে থাকার কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গুলশান থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়

আপডেট টাইম : ১০:০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০১৬

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়, বনানীর জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া থেকে সরিয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ মিছিল ও ঘেরাও কার্যক্রম নিষিদ্ধ হচ্ছে।

এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কূটনৈতিক এলাকাকে একটি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কার্যালয় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া কূটনৈতিক এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কূটনৈতিক এলাকাকে একটি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গুলশান থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং বনানী থেকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরাতে হবে। তবে তাঁদের কার্যালয়ের কারণে এই এলাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন না দুই দলের নেতারা। এ ছাড়া এখানে শাসক দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ছোট ছোট একাধিক কার্যালয় আছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের ডিসি ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়াসহ কূটনৈতিক এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয় রয়েছে। কার্যালয় থাকায় ওই এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের আনাগোনা থাকে। মিছিল-মিটিংসহ মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ের ঘটনাও ঘটে। চিঠিতে ৮ জানুয়ারি কানাডীয় হাইকমিশনের পাশে, ২৫ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের গ্যারেজের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল হামলায় ১৮ জন আহত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি গুলশান-২-এর মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক বহনকারী গাড়ির ছাদে ককটেল বিস্ফোরিত হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়।

ইতোমধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গুলশানের সব বাণিজ্যিক ভবন, রাজনৈতিক কার্যালয় ও অন্যান্য অবৈধ ভবনের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ও।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘আমার এলাকায় ছোটখাট যে সব রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল তা উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন তা আমরা করব।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুলশান এলাকার সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেন নতুনভাবে কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। গুলশান ও বনানীতে সরকারিভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কড়াইল ও সাততলা বস্তি উচ্ছেদ করে আধুনিক আবাসন গড়ে তোলা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব রাজনৈতিক কার্যালয়, বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ অন্যান্য স্কুল, কলেজ সরিয়ে নেওয়ার কথা বলে আসছি। সম্প্রতি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঘটনার পর আবার বিষয়টি জোরালোভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনাই গুলশান থেকে সরিয়ে নেব।’

এদিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির কার্যালয়ের কারণে গুলশানে কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না; বরং রাজনৈতিক উন্মেষে এ কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে আমি মনে করি। সরকার অনেক দিন ধরেই এ কার্যালয় সরিয়ে দিতে চাইছে।’

তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা আমরা মেনে নেব। তবে আমি মনে করি, প্রথম থেকেই আবাসিক এলাকায় এসব স্কুল, কলেজ, রাজনৈতিক কার্যালয় বা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা উচিত হয়নি। তবে আমি মনে করি না জাতীয় পার্টির কার্যালয় বনানীতে থাকার কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে।’