ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য বাহিনী তৈরি করেছিল হামাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় হামাসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পাঁচটি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী। ২০২০ সাল থেকে সামরিক মহড়ায় একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই তারা এই হামলা চালায়।

এই গোষ্ঠীগুলো গাজায় যে যৌথ মহড়া চালিয়েছিল তার সঙ্গে ইসরাইলের ওপর প্রাণঘাতী হামলার সময় ব্যবহৃত কৌশলের সাদৃশ্য রয়েছে।

তারা এসব মহড়া চালিয়েছিল এমন স্থানে যেখান থেকে ইসরাইলের সঙ্গে ‘সীমানার’ দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম এবং এই ভিডিও তারা সমাজমাধ্যমেও পোস্ট করে।

এই মহড়ার সময় জিম্মিদের কীভাবে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া হবে, কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কৌশল এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা-সহ একাধিক বিষয় তারা অনুশীলন করে। তাদের শেষ মহড়াটি হয়েছিল ৭ অক্টোবরের হামলার মাত্র ২৫ দিন আগে।

বিবিসি আরবি এবং বিবিসি ভেরিফাই নানা প্রমাণ সংগ্রহ করেছে যা থেকে দেখা যায়, হামাস কীভাবে গাজার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের আকার নেয়।

হামাসের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর চারটি মহড়ার মধ্যে প্রথমটিকে (যার কোডনেম ছিল স্ট্রং পিলার) গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ‘শক্তিশালী বার্তা এবং ঐক্যের চিহ্ন’ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হামাস ছিল ওই জোটের সবচাইতে প্রভাবশালী শক্তি। ‘যৌথ অপারেশন রুম’-এর তত্ত্বাবধানে হওয়া মহড়াগুলো অনেকটা ‘ওয়ার গেম’-এর মতো যাতে অংশগ্রহণের জন্য আরও ১০ টি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি উপগোষ্ঠী একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছিল ওই জোটটি।

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীনে আনার জন্য ২০১৮ সালে এই কাঠামোটি তৈরি করা হয়েছিল।

হামাস ২০১৮ এর আগে পর্যন্ত গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র দল প্যালেস্টানিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)-এর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করত। হামাসের মতোই, পিআইজে-ও যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত।

এর আগেও হামাস অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে একাধিক সংঘাতের সময় যুদ্ধ করেছে, তবে ২০২০ সালের মহড়াটি প্রমাণ করে এসব উপগোষ্ঠী এবার একত্রিত হয়েছে।

হামাসের নেতা বলেছেন, প্রথম মহড়া ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ‘স্থায়ী প্রস্তুতির’ প্রতিফলন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মহড়াটি ছিল তিন বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি যৌথ মহড়ার মধ্যে প্রথম, যার প্রতিটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ করা রয়েছে।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা ফুটেজে ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়ার সময় হামাসের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়া পিআইজে-সহ ১০টি গোষ্ঠীকে দৃশ্যত চিহ্নিত করেছে বিবিসি।

পাঁচটি গোষ্ঠী ৭ অক্টোবরে হওয়া ওই হামলায় অংশ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছিল। অন্য তিনটি গোষ্ঠীও টেলিগ্রামে লিখিত বিবৃতি দিয়ে ওই একই হামলায় অংশ নেওয়ার দাবি জানায়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল থেকে গাজায় বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া একাধিক নারী ও শিশুকে খুঁজে বের করার জন্য হামাসের ওপর চাপ বাড়ার পর এই গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পিআইজে, মুজাহিদিন ব্রিগেড এবং আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড নামে তিনটি গোষ্ঠী দাবি করেছে যে হামাসের পাশাপাশি তারাও ওই দিন ইসরাইলি জিম্মিদের আটক করেছিল।

গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা হামাসের জিম্মিদের খুঁজে বের করার ওপর নির্ভর করছে।

উল্লেখ্য, এই গোষ্ঠীতে কট্টর ইসলামপন্থী থেকে তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ- বিস্তৃত মতাদর্শ অনুসরণ করে এমন সংগঠন অংশগ্রহণ নিলেও তারা প্রত্যেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সহিংস হামলা চালানোর বিষয়ে একমত ছিল।

হামাসের বিবৃতিতে বারবার গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র উপগোষ্ঠীর মধ্যে ‘ঐক্যের’ বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। একথাও জানানো হয় ইসরাইলের উপর আক্রমণের পরিকল্পনায় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও যৌথ মহড়ায় প্রতিটি গোষ্ঠী সমান অংশীদার ছিল।

প্রথম মহড়ার ফুটেজে দেখা যায়, একটি বাঙ্কারে মহড়া পরিচালনা করতে আসা মুখোশধারী কমান্ডারদের। রকেট নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহড়া।

পরের দৃশ্যে দেখা যায়, মহড়া চলাকালীন সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলি পতাকা দিয়ে চিহ্নিত একটি নকল ট্যাংকের উপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের গোষ্ঠীরই এক সদস্যকে বন্দী সাজিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ভবনগুলোর উপর হামলা চালাতেও দেখা যায় ওই মহড়ার ভিডিও ফুটেজে।

প্রায় একই রকমভাবে ৭ অক্টোবর সৈন্যদের আটক এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। ওইদিন হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং আনুমানিক ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

প্রায় এক বছর পরে দ্বিতীয় ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের (হামাসের সশস্ত্র শাখার আনুষ্ঠানিক নাম) কমান্ডার আয়মান নোফাল বলেন, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাসের মহড়ার লক্ষ্য ছিল ‘প্রতিরোধকারী দলগুলির ঐক্য নিশ্চিত করা’।

তিনি বলেন, এই মহড়াগুলো ‘শত্রুদের জানাবে, গাজা সীমান্তের দেয়াল ও প্রকৌশল ব্যবস্থা তাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

হামাসের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, এই যৌথ সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘গাজার নিকটবর্তী অঞ্চলের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করাও।’

এই মহড়ার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এবং এই ঘটনাকে চিহ্নিত করার জন্য যোদ্ধাদের প্রচারমূলক চিত্রগুলি প্রকাশ করা হয়েছিল যাতে ভবনগুলো খালি এবং একটি সামরিক ঘাঁটির প্রতীক হিসেবে তৈরি একটি বেস-এ ট্যাঙ্ক দখল করতে দেখা যায়।

মহড়াগুলো ইসরাইলেই হয়েছে, তাই এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় যে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।

এর আগে হামাসের প্রশিক্ষণ ব্যাহত করতে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বিমান হামলা চালিয়েছে। স্ট্রং পিলার মহড়ার জন্য ব্যবহৃত সাইটে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তারা প্রথম বোমা বর্ষণ করে।

হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা সীমান্তের কাছে নজরদারির কাজে নিবিষ্ট নারী রক্ষীরা অস্বাভাবিক উচ্চতায় হওয়া ড্রোন কার্যকলাপের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। হামাস তাদের অবস্থানের প্রতিলিপি সহ পর্যবেক্ষণ পোস্টগুলো দখল করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছিল।

কিন্তু ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সতর্কবার্তাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।

গাজায় আইডিএফের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আভিভি বিবিসিকে বলেন, অনেক গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে তারা এই প্রশিক্ষণগুলি নিচ্ছে- সর্বোপরি, ভিডিওগুলি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি সীমান্ত (ইসরাইলের সাথে) থেকে মাত্র কয়েকশত মিটার দূরে ঘটছে।

তবে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী এই মহড়া সম্পর্কে জানলেও তারা ‘কিসের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তা তারা জানতে পারেনি।’

আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর হামাসের প্রথম জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা নোফালকে ‘নির্মূল’ করে।

মহড়াটি বাস্তবসম্মত কিনা তা নিশ্চিত করতে হামাস অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিল।

মহড়ার অংশ হিসেবে যোদ্ধারা ২০২২ সালে আইডিএফ নিয়ন্ত্রিত গাজা ও ইসরাইলের মধ্যস্থিত রুট- এরেজ ক্রসিং থেকে মাত্র ২.৬ কিলোমিটার (১.৬ মাইল) দূরে নির্মিত একটি নকল ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল।

গাজার সুদূর উত্তরে, ‘ব্যারিয়ার’ থেকে মাত্র ৮০০ মিটার (০.৫ মাইল) দূরে অবস্থিত ওই অঞ্চলের আকাশের চিত্রের সঙ্গে প্রশিক্ষণের ফুটেজে দেখা জায়গাটির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যগুলির সামঞ্জস্য লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে বিবিসি ভেরিফাই। নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত ওই স্থানটি এখনও বিং মানচিত্রে দৃশ্যমান।

প্রশিক্ষণ শিবিরটি একটি ইসরাইলি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং উত্তলিত পর্যবেক্ষণ বাক্সের ( যে নিরাপত্তা বাধারগুলি ইসরাইল শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে) ১.৬ কিলোমিটার (১ মাইল) এর মধ্যে অবস্থিত ছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যেভাবে ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য বাহিনী তৈরি করেছিল হামাস

আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় হামাসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পাঁচটি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী। ২০২০ সাল থেকে সামরিক মহড়ায় একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই তারা এই হামলা চালায়।

এই গোষ্ঠীগুলো গাজায় যে যৌথ মহড়া চালিয়েছিল তার সঙ্গে ইসরাইলের ওপর প্রাণঘাতী হামলার সময় ব্যবহৃত কৌশলের সাদৃশ্য রয়েছে।

তারা এসব মহড়া চালিয়েছিল এমন স্থানে যেখান থেকে ইসরাইলের সঙ্গে ‘সীমানার’ দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম এবং এই ভিডিও তারা সমাজমাধ্যমেও পোস্ট করে।

এই মহড়ার সময় জিম্মিদের কীভাবে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া হবে, কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কৌশল এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা-সহ একাধিক বিষয় তারা অনুশীলন করে। তাদের শেষ মহড়াটি হয়েছিল ৭ অক্টোবরের হামলার মাত্র ২৫ দিন আগে।

বিবিসি আরবি এবং বিবিসি ভেরিফাই নানা প্রমাণ সংগ্রহ করেছে যা থেকে দেখা যায়, হামাস কীভাবে গাজার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের আকার নেয়।

হামাসের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর চারটি মহড়ার মধ্যে প্রথমটিকে (যার কোডনেম ছিল স্ট্রং পিলার) গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ‘শক্তিশালী বার্তা এবং ঐক্যের চিহ্ন’ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হামাস ছিল ওই জোটের সবচাইতে প্রভাবশালী শক্তি। ‘যৌথ অপারেশন রুম’-এর তত্ত্বাবধানে হওয়া মহড়াগুলো অনেকটা ‘ওয়ার গেম’-এর মতো যাতে অংশগ্রহণের জন্য আরও ১০ টি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি উপগোষ্ঠী একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছিল ওই জোটটি।

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীনে আনার জন্য ২০১৮ সালে এই কাঠামোটি তৈরি করা হয়েছিল।

হামাস ২০১৮ এর আগে পর্যন্ত গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র দল প্যালেস্টানিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)-এর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করত। হামাসের মতোই, পিআইজে-ও যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত।

এর আগেও হামাস অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে একাধিক সংঘাতের সময় যুদ্ধ করেছে, তবে ২০২০ সালের মহড়াটি প্রমাণ করে এসব উপগোষ্ঠী এবার একত্রিত হয়েছে।

হামাসের নেতা বলেছেন, প্রথম মহড়া ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ‘স্থায়ী প্রস্তুতির’ প্রতিফলন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মহড়াটি ছিল তিন বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি যৌথ মহড়ার মধ্যে প্রথম, যার প্রতিটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ করা রয়েছে।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে পোস্ট করা ফুটেজে ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়ার সময় হামাসের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়া পিআইজে-সহ ১০টি গোষ্ঠীকে দৃশ্যত চিহ্নিত করেছে বিবিসি।

পাঁচটি গোষ্ঠী ৭ অক্টোবরে হওয়া ওই হামলায় অংশ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছিল। অন্য তিনটি গোষ্ঠীও টেলিগ্রামে লিখিত বিবৃতি দিয়ে ওই একই হামলায় অংশ নেওয়ার দাবি জানায়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল থেকে গাজায় বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া একাধিক নারী ও শিশুকে খুঁজে বের করার জন্য হামাসের ওপর চাপ বাড়ার পর এই গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পিআইজে, মুজাহিদিন ব্রিগেড এবং আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড নামে তিনটি গোষ্ঠী দাবি করেছে যে হামাসের পাশাপাশি তারাও ওই দিন ইসরাইলি জিম্মিদের আটক করেছিল।

গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা হামাসের জিম্মিদের খুঁজে বের করার ওপর নির্ভর করছে।

উল্লেখ্য, এই গোষ্ঠীতে কট্টর ইসলামপন্থী থেকে তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ- বিস্তৃত মতাদর্শ অনুসরণ করে এমন সংগঠন অংশগ্রহণ নিলেও তারা প্রত্যেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সহিংস হামলা চালানোর বিষয়ে একমত ছিল।

হামাসের বিবৃতিতে বারবার গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র উপগোষ্ঠীর মধ্যে ‘ঐক্যের’ বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। একথাও জানানো হয় ইসরাইলের উপর আক্রমণের পরিকল্পনায় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও যৌথ মহড়ায় প্রতিটি গোষ্ঠী সমান অংশীদার ছিল।

প্রথম মহড়ার ফুটেজে দেখা যায়, একটি বাঙ্কারে মহড়া পরিচালনা করতে আসা মুখোশধারী কমান্ডারদের। রকেট নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহড়া।

পরের দৃশ্যে দেখা যায়, মহড়া চলাকালীন সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলি পতাকা দিয়ে চিহ্নিত একটি নকল ট্যাংকের উপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের গোষ্ঠীরই এক সদস্যকে বন্দী সাজিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ভবনগুলোর উপর হামলা চালাতেও দেখা যায় ওই মহড়ার ভিডিও ফুটেজে।

প্রায় একই রকমভাবে ৭ অক্টোবর সৈন্যদের আটক এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। ওইদিন হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং আনুমানিক ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

প্রায় এক বছর পরে দ্বিতীয় ‘স্ট্রং পিলার’ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের (হামাসের সশস্ত্র শাখার আনুষ্ঠানিক নাম) কমান্ডার আয়মান নোফাল বলেন, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাসের মহড়ার লক্ষ্য ছিল ‘প্রতিরোধকারী দলগুলির ঐক্য নিশ্চিত করা’।

তিনি বলেন, এই মহড়াগুলো ‘শত্রুদের জানাবে, গাজা সীমান্তের দেয়াল ও প্রকৌশল ব্যবস্থা তাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

হামাসের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, এই যৌথ সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘গাজার নিকটবর্তী অঞ্চলের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করাও।’

এই মহড়ার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এবং এই ঘটনাকে চিহ্নিত করার জন্য যোদ্ধাদের প্রচারমূলক চিত্রগুলি প্রকাশ করা হয়েছিল যাতে ভবনগুলো খালি এবং একটি সামরিক ঘাঁটির প্রতীক হিসেবে তৈরি একটি বেস-এ ট্যাঙ্ক দখল করতে দেখা যায়।

মহড়াগুলো ইসরাইলেই হয়েছে, তাই এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় যে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।

এর আগে হামাসের প্রশিক্ষণ ব্যাহত করতে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বিমান হামলা চালিয়েছে। স্ট্রং পিলার মহড়ার জন্য ব্যবহৃত সাইটে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তারা প্রথম বোমা বর্ষণ করে।

হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা সীমান্তের কাছে নজরদারির কাজে নিবিষ্ট নারী রক্ষীরা অস্বাভাবিক উচ্চতায় হওয়া ড্রোন কার্যকলাপের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। হামাস তাদের অবস্থানের প্রতিলিপি সহ পর্যবেক্ষণ পোস্টগুলো দখল করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছিল।

কিন্তু ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সতর্কবার্তাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।

গাজায় আইডিএফের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আভিভি বিবিসিকে বলেন, অনেক গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে তারা এই প্রশিক্ষণগুলি নিচ্ছে- সর্বোপরি, ভিডিওগুলি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি সীমান্ত (ইসরাইলের সাথে) থেকে মাত্র কয়েকশত মিটার দূরে ঘটছে।

তবে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী এই মহড়া সম্পর্কে জানলেও তারা ‘কিসের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তা তারা জানতে পারেনি।’

আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর হামাসের প্রথম জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা নোফালকে ‘নির্মূল’ করে।

মহড়াটি বাস্তবসম্মত কিনা তা নিশ্চিত করতে হামাস অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিল।

মহড়ার অংশ হিসেবে যোদ্ধারা ২০২২ সালে আইডিএফ নিয়ন্ত্রিত গাজা ও ইসরাইলের মধ্যস্থিত রুট- এরেজ ক্রসিং থেকে মাত্র ২.৬ কিলোমিটার (১.৬ মাইল) দূরে নির্মিত একটি নকল ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল।

গাজার সুদূর উত্তরে, ‘ব্যারিয়ার’ থেকে মাত্র ৮০০ মিটার (০.৫ মাইল) দূরে অবস্থিত ওই অঞ্চলের আকাশের চিত্রের সঙ্গে প্রশিক্ষণের ফুটেজে দেখা জায়গাটির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যগুলির সামঞ্জস্য লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে বিবিসি ভেরিফাই। নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত ওই স্থানটি এখনও বিং মানচিত্রে দৃশ্যমান।

প্রশিক্ষণ শিবিরটি একটি ইসরাইলি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং উত্তলিত পর্যবেক্ষণ বাক্সের ( যে নিরাপত্তা বাধারগুলি ইসরাইল শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে) ১.৬ কিলোমিটার (১ মাইল) এর মধ্যে অবস্থিত ছিল।