অবরুদ্ধ গাজার সবখানেই এখন মৃত্যুর মিছিল। গভীর হচ্ছে মানবিক সংকট। ভয়, স্বজন হারানোর বেদনা, অনিদ্রা, খাবারের অভাব এবং প্রতিনিয়ত চারপাশে মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্যগুলো একেবারেই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে শহরটিতে। খাদ্য-পানির অভাবে জর্জরিত মানুষগুলোর শুকনো রুটিই আহারের একমাত্র সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান এ বেহালে শুধু দুই রুটিতেই দিন যাচ্ছে বেশিরভাগ গাজাবাসীর।
গাজায় ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের শীর্ষ সহায়তা কর্মকর্তা থমাস হোয়াইট বলেছেন, ‘গাজার গড় বাসিন্দারা দিনে দুটি রুটি খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গাজায় প্রায় ৮৯টি বেকারিকে সহায়তা করলেও তারা পানির জন্য ক্রমেই মরিয়া হয়ে উঠছেন।’ একটি ভিডিও ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি আরও বলেন, ‘উপত্যকাটি মৃত্যু ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরাইল মধ্য গাজার একটি গুদামে হামলা চালায়, যেখানে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) খাদ্য মজুত ছিল। ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি ও ফিলিস্তিনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সামের আবদেলজাবের বলেছেন, এই ঘটনাটিতে বাসিন্দারা আশা হারাচ্ছেন।
ইসরাইলের হুমকিতে গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরের জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা। নিরাপদ নয় সেখানেও। একদিকে বোমা হামলার ভয়, অন্যদিকে মানবিক বিপর্যয়ের অস্তিরতা সবার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। মৌলিক চাহিদা ও পর্যাপ্ত পানির অভাবে কাতরাচ্ছে মানুষগুলো। শিবিরে নেই কোনো টয়লেটের সুব্যবস্থাও। কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে টয়লেট রয়েছে। যার সামনে ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ গাজাবাসী বলেছেন, শিবিরটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য খুব কমই সুবিধা রয়েছে। কুর্দি নিউজ আউটলেট রুদাও বাসিন্দাদের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। উত্তর গাজা থেকে আসা বাসিন্দা ফাতিমা রাদওয়ান বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থা খুবই গুরুতর। এখানে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। আমরা লন্ড্রি করতে পারি না। এমনকি মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কোনো জায়গাও নেই। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ দূরত্ব হাঁটতে হয়। তারপর দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।’ গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ইসমাইল আল-জাবালি বলেছেন, তারা পর্যাপ্ত সাহায্য পাচ্ছেন না। মুহাম্মাদ ওবায়েদ বলেন, ‘শিবিরে যথাযথ টয়লেট বা পানির মতো পরিষেবা নেই। আমরা পানির বোতল কিনতে বাধ্য হচ্ছি। টয়লেটে যেতে আমাদের সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হয়।’ আসমা আল-ওস্তাদ বলেন, বর্তমানে আমরা কঠিনভাবে জীবন পার করছি। এখানে কোনো গদি নেই, আমরা প্লাস্টিকের ব্যাগে মাথা রেখে ঘুমাই। দিনের বেলা তাঁবুগুলো খুব গরম থাকে। রাতে আমরা খুব ঠান্ডা অনুভব করি। কারণ আমরা মাটিতে ঘুমাই। আর তাঁবুগুলোর গন্ধও বাজে, কারণ সেগুলো পুরোনো তাঁবু। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরতে চাই, কারণ আমরা ক্লান্ত।’ বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ইসমাইল আল-জাবালি বলেছেন, তারা পর্যাপ্ত সাহায্য পাচ্ছেন না। আমরা একটি তাঁবুতে দশজন ঘুমাই। জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) আমাদের যা সরবরাহ করেছে তা যথেষ্ট নয়।