ঢাকা ০৯:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে অসময়ে বোরো চাষে অনন্য নজির

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩
  • ৯১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে অসময়ে বোরো ধান আবাদ করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন ডা. শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক। চলতি আউশ মৌসুমে বোরো ধান চাষ করে তিনি বাম্পার ফলনও পেয়েছেন। মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের কুড়িবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের পেশা কৃষিকাজ হলেও তিনি ভোলা সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, আউশের মৌসুমে বোরো আবাদ করলে একই জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করা যায়। অন্যদিকে এ মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। একই সঙ্গে সেচ ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়। আউশ ধান চাষে এক বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ ধান পাওয়া যায়- অথচ বোরো চাষে একই জমিতে ২৮-৩০ মণ ধান পাওয়া যায়। ফলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

তিনি জানান, চার বছর আগে আউশের মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বোরো ধানের চায়না গোল্ডেন-১ এবং দেশীয় হাইব্রিড ২৮ ও ২৯ জাতের ধান চাষ শুরু করেন। আবাদের প্রথম বছরই ব্যাপক সফলতা পান। এরপর থেকে প্রতিবছরই আউশের মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছেন তিনি। চলতি বছর ৬ বিঘা (১৯৮ শতাংশ) জমিতে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ চাষ করেছেন তিনি। আউশের মৌসুমে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের ফলন হয় অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া সেচের পানি ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় ধান চাষে তুলনামূলক খরচের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসে। আউশ ধান চাষের মৌসুমে বোরো জাতের দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ চাষ করার পর একই জমিতে প্রথমে বোরো আমন এবং পরে রোপা বোরো চাষ করা যায়। এভাবে একই জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন তিনি। তার এ সফলতা দেখে ওই এলাকার অনেক কৃষকই এখন আউশের মৌসুমে বোরো দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধানের আবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে সারাদেশেই এ জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ডা. শফিকুল ইসলাম।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, আউশ মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডা. শফিকুল ইসলাম। এক জমিতে বছরে তিন বার ফলনও পেয়েছেন তিনি। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এখন দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধান চাষ করছেন। ফলনও খুব ভালো হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক আবু বকর সিদ্দিকী জানান, ডা. শফিকুলের পরামর্শে গেল আউশ মৌসুমে স্থানীয় ভাষায় ৪ পাখি(১২০ শতাংশ) জমিতে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। স্থানীয় ভাষায় পাখি প্রতি ৩০ মণ করে ধান পেয়েছেন তিনি। এছাড়া বছরে একই জমিতে তিনবার ধান চাষ করা গেছে। চলতি মৌসুমেও বোরো আবাদ করেছেন। আশা করছেন- গেল বছরের মত এবারও ভালো ফলন পাবেন।

মধুপুর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, ডা. শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক আউশ মৌসুমে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ বোরো ধানের জাত আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। চলতি আউশ মৌসুমেও তিনি একই জাতের ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন। তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক এই জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।

এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, আউশ মৌসুমে বোরো ধান চাষ করে ডা. শফিকুল ইসলাম সাফল্য পেয়েছেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকও লাভবান হয়েছেন। ফলে অন্য কৃষকরাও ওই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টাঙ্গাইলে অসময়ে বোরো চাষে অনন্য নজির

আপডেট টাইম : ০৬:৫১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে অসময়ে বোরো ধান আবাদ করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন ডা. শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক। চলতি আউশ মৌসুমে বোরো ধান চাষ করে তিনি বাম্পার ফলনও পেয়েছেন। মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের কুড়িবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের পেশা কৃষিকাজ হলেও তিনি ভোলা সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, আউশের মৌসুমে বোরো আবাদ করলে একই জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করা যায়। অন্যদিকে এ মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। একই সঙ্গে সেচ ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়। আউশ ধান চাষে এক বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ ধান পাওয়া যায়- অথচ বোরো চাষে একই জমিতে ২৮-৩০ মণ ধান পাওয়া যায়। ফলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

তিনি জানান, চার বছর আগে আউশের মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বোরো ধানের চায়না গোল্ডেন-১ এবং দেশীয় হাইব্রিড ২৮ ও ২৯ জাতের ধান চাষ শুরু করেন। আবাদের প্রথম বছরই ব্যাপক সফলতা পান। এরপর থেকে প্রতিবছরই আউশের মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছেন তিনি। চলতি বছর ৬ বিঘা (১৯৮ শতাংশ) জমিতে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ চাষ করেছেন তিনি। আউশের মৌসুমে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের ফলন হয় অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া সেচের পানি ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় ধান চাষে তুলনামূলক খরচের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসে। আউশ ধান চাষের মৌসুমে বোরো জাতের দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ চাষ করার পর একই জমিতে প্রথমে বোরো আমন এবং পরে রোপা বোরো চাষ করা যায়। এভাবে একই জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন তিনি। তার এ সফলতা দেখে ওই এলাকার অনেক কৃষকই এখন আউশের মৌসুমে বোরো দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধানের আবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে সারাদেশেই এ জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ডা. শফিকুল ইসলাম।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, আউশ মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডা. শফিকুল ইসলাম। এক জমিতে বছরে তিন বার ফলনও পেয়েছেন তিনি। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এখন দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধান চাষ করছেন। ফলনও খুব ভালো হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক আবু বকর সিদ্দিকী জানান, ডা. শফিকুলের পরামর্শে গেল আউশ মৌসুমে স্থানীয় ভাষায় ৪ পাখি(১২০ শতাংশ) জমিতে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। স্থানীয় ভাষায় পাখি প্রতি ৩০ মণ করে ধান পেয়েছেন তিনি। এছাড়া বছরে একই জমিতে তিনবার ধান চাষ করা গেছে। চলতি মৌসুমেও বোরো আবাদ করেছেন। আশা করছেন- গেল বছরের মত এবারও ভালো ফলন পাবেন।

মধুপুর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, ডা. শফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক আউশ মৌসুমে দেশীয় হাইব্রিড গোল্ডেন-১ বোরো ধানের জাত আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। চলতি আউশ মৌসুমেও তিনি একই জাতের ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন। তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক এই জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।

এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, আউশ মৌসুমে বোরো ধান চাষ করে ডা. শফিকুল ইসলাম সাফল্য পেয়েছেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকও লাভবান হয়েছেন। ফলে অন্য কৃষকরাও ওই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।