সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর গুণধর পুত্র রনি চৌধুরীকে খুঁজে পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। রনি চৌধুরীর মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতে লিপ্ত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। গ্রেফতার এড়াতে অপরাধীদের গডফাদার রনি চৌধুরী আত্মগোপনে আছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে গতকাল পুলিশ সদর দফতর বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। উত্তরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলশান, তেজগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ইয়াবার গোডাউনে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে র্যাব। এদিকে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পদ থেকে নাম বাদ দিতে দলের হাইকমান্ড নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, মন্ত্রিপুত্র রনি চৌধুরীর অপরাধের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি মাদক ব্যবসা, সরকারি জমি দখলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। গতকাল কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, রনি চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসি ও থানার ওসিদের বলা হয়েছে। বাবার আশকারা পেয়ে রনি ও তার বড় ভাই দীপু চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ চালাচ্ছেন। পর্দার আড়ালে থেকে রনি চৌধুরী অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। তার ইয়াবা কারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। ছাড় দেওয়ার সুযোগ মিলবে না।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় আড়াই বিঘা জমি উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ বৈঠক করেছেন। গতকাল সকালে রনি চৌধুরীর দখলে নেওয়া নির্মীয়মাণ মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫-১৬ জন সশস্ত্র যুবক পাহারা দিচ্ছে। তারা শ্রমিকদের বলছে, ‘বস্ রনি চৌধুরী অনেক প্রভাবশালী। মার্কেট নির্মাণ করা হবেই। লেখালেখি করে কোনো লাভ হবে না। বসের বাবা মন্ত্রী। সুতরাং কোনো ভয় নেই।’ এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা রনি চৌধুরীর পালিত এক সন্ত্রাসীকে বলছিলেন, দখল হওয়া জয়গাটি পুনরুদ্ধার করা হতে পারে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই যুবক কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করেন। র্যাব-১-এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রনি চৌধুরীর ইয়াবা কারখানাগুলোতে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুলশান, তেজগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে তার ইয়াবা তৈরির কারখানা আছে বলে আমরাও তথ্য পেয়েছি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অনৈতিক কাজ করছেন ক্ষমতাধর রনি চৌধুরী। এ ছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফে পুলিশ-র্যাবের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে তার আছে গভীর সখ্য।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কড়া নির্দেশ রয়েছে। আমরা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র পেলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি পুলিশের দৃষ্টিতে এসেছে। অপরাধ কর্মকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকবে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় রনি চৌধুরীকে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।