হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া রাজশাহীর চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের এক গৃহবধূর কাছ থেকে মাদক কারবারি চালানোর জন্য সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ দাখিল হওয়ায় এদিন রাতেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়। রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে ওসির বিরুদ্ধে দখিলকৃত অভিযোগের সঙ্গে পেনড্রাইভে করে সেই অডিও রেকর্ডটিও সংযুক্ত করে অভিযোগকারি গৃহবধূ সাহারা খাতুন (২৮)। যার প্রেক্ষিতে ওসি মাহবুবুল আলমকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করেন পুলিশ সুপার।
তথ্যটি নিশ্চিত করে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম জানান, এই ঘটনায় তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে ওই কমিটিকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার একটি ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিও রেকর্ডটি সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে। অভিযোকারি সাহারা খাতুন চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। আর এই গৃহবধূর স্বামী কালু ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছে।
সাহারা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। চারঘাট উপজেলায় তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক মাদক কারবারিকে র্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। যে কারণেই তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর ওসি মাহবুবুল আলমকে মুঠোফোনের মাধ্যমে অভিযোগ দেন। তখন ওসি তাকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। পরে থানায় গেলে ওসি তাকে কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনাসহ অন্যরা আর অত্যাচার করবেনা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৭ লাখ টাকা ঘুষ চান। আর ওইসব কথা কৌশলে রেকর্ড করেন ওই নারী। ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না। চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনাও করেন তিনি। এরপর বলেন, দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেবো। এরপর গৃহবধূ সাহারাকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছেন (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।
এরপর ওসি বলেন, এখনও তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। সাত লাখ টাকা লাগবে, কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। ওসি আরও বলেন, মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবেন না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেবো। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে। রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।
ওসি মাহবুবুল আরও বলেন, ৫ লাখ আর দুই লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেবো। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে। আর ওই অডিওতে গৃহবধূ সাহারার ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করেন এই অভিযুক্ত ওসি।