প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এই সময়ে সারা দেশে দলটির বিভিন্ন স্তরে যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগকে মননে ধারণ করেন না, সুযোগ-সুবিধা ও স্বার্থের জন্য যোগ দিয়েছেন- এমন ব্যক্তিরাও আছেন এই তালিকায়। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে দলে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার এই সময়টাতে সুযোগ সন্ধানীরা বিভিন্নভাবে দলে ভিড় করছেন। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকজন দলে ঢুকে পড়েছেন। স্থানীয়ভাবে দলের কোনো কোনো নেতা নিজের স্বার্থে গ্রুপ ভারী করা ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং কৌশলে দলে নিয়েছেন। এরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও ঢুকে পড়েছেন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদান ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে তার পক্ষে শোক প্রকাশ করে দলের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এরা ছিলেন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী।
গত কয়েক বছর ধরে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে দলে ব্যাপক তোলপাড় চললেও এরপরই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, দলে অনেক অনুপ্রবেশকারী আছেন, নির্বাচনের আগে যারা দলের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারেন, দলের ক্ষতির কারণ হতে পারেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার ঘোষণা দেয়া হলেও নিজ দলের জন্য প্রতিবন্ধকতা হতে পারেন অনুপ্রবেশকারীরা। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রং বদলাচ্ছেন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নতুন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলটির জন্য। ইতোমধ্যেই তারা মুখোশ খুলতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগেই দলবদল করতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সারা দেশে শতাধিক নেতা আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করেছেন। এরা সবাই অনুপ্রবেশকারী বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বেশ সতর্ক বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে দল। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত যে সব কমিটি হয়েছে সেগুলো কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
গত ১০ জুলাই জামালপুর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে ৩০ জন কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলটির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা। গত বছরের ১৮ নভেম্বর বরগুনার জেলার আমতলী উপজেলা বিএনপিতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের ৫০ জন নেতাকর্মী। আমতলীর চাওড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফেজ উদ্দিন প্যাদা ও সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিতে যোগদান করেন নেতাকর্মীরা।
গত ২ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে হাসেম সরদার (৬০) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী দল ত্যাগ করেন। খোজঁখবর নিয়ে জানা গেছে হাসেম সরদারের শরীয়তপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
এছাড়া দলের নীতি আর্দশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যতে শোক জানিয়ে তার পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া দুই শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের বেশিভাগ অনুপ্রবেশকারী ছিলেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা টাইমসকে বলেন, দলের মধ্যে যেসব অনুপ্রবেশকারী আছে তাদের বিষয় আওয়ামী লীগ সব সময় সতর্ক আছে। অনুপ্রবেশকারীরা কখনো দলের দুঃসময়ে থাকবে না। এরাই দলকে বির্তকিত করে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় একাটি সংগঠন। তাই দলে বিভিন্ন ভাবে কিছু সুবিধাবাধী অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়ছে। যারা চিহ্নিত হয়েছে তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সুবিধাবাদিদের তাদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে, তাদের আচরণে আমাদের দলের আদর্শবান-ত্যাগী নেতাকর্মীর হৃদয়ে আঁচড় লাগে। সুবিধাবাদিদের স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আওয়ামী লীগ তাদের বিষয় সতর্ক আছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সুযোগ সন্ধানীরা বিভিন্নভাবে দলে ভিড়ে করছেন। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী লোকজন দলে ঢুকে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে দলের কোনো কোনো নেতা নিজের স্বার্থে গ্রুপ ভারী করা ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং কৌশলে দলে নিয়েছে। এরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও ঢুকে পড়ছে। এতে দলের ত্যাগী ও পুরনো নেতাকর্মীরা অনেক সময় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্ম দিয়েছে। পাপাপাশি অনুপ্রেশকারীরা আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যববহার করছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করছে। অনুপ্রবেশকারীরা কখনো দলের বিপদে থাকবে না। তারা দলের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে না। অনুপ্রবেশকারীদের কখনোই দিয়ে দলের শক্তি বৃদ্ধি করা যায় না, বদনাম হয়, দলের শক্তি ক্ষয় হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ তাদের বিষয়ে সতর্ক আছে।