ওজন স্লিপ নিয়ে বেনাপোল বন্দরে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে জটিলতা

বেনাপোল স্থলবন্দরে ওজন স্লিপ নিয়ে জটিলতায় আটকে রয়েছে বিপুলসংখ্যক পণ্য চালান। ওয়েব্রিজের ওজন স্লিপ নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ দিন ধরে বেনাপোল কাস্টমস পরীক্ষণ (আইআরএম) গ্রুপ আমদানীকৃত কমার্শিয়াল পণ্যের পরীক্ষণ রিপোর্ট দিচ্ছে না। ফলে বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে শতাধিক পণ্য চালান। আর বন্দর ও কাস্টমসের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতার কারণে আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বেনাপোল স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্য চালানগুলো প্রবেশের আগে বন্দর স্কেলে ট্রাকসহ পণ্যের মোট ওজন নিশ্চিত করা হয়। পণ্য আনলোড হওয়ার পরে আবার খালি ট্রাক ওজন করে পণ্যের নিট ওজন নিশ্চিত করে ওজন স্লিপ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে ডুপ্লিকেট স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্য খালাস করে নিয়ে গেছে। আর ওজন স্লিপে ওজন কমানোর কারণে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য বেনাপোল কাস্টমসের একটি চিঠি বন্দর পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওজন স্লিপের সত্যতা যাচাই না করে কাস্টমসের চিঠির বিপরীতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর অন্য একটি চিঠি দেয়। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজগুলোর প্রতিটি পণ্য চালানের ওজন স্লিপে কাস্টমস ও স্থলবন্দরের প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলমান। এ ঘটনায় কাস্টমস হাউজ (আইআরএম) কর্তৃক পণ্য পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। পরীক্ষণ রিপোর্ট না হলে সে চালানের শুল্কায়নও সম্ভব নয়। এ কারণে বন্দর থেকে আমদানি করা কমার্শিয়াল পণ্য খালাস হচ্ছে না। তাতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কমার্শিয়াল পণ্য কাস্টম (আইআরএম) পরীক্ষণ গ্রুপ পরীক্ষণ করলেও রিপোর্ট না হওয়ায় শুল্কায়ন হচ্ছে না। ফলে বন্দর থেকে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন জানান, কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপ নকল করে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে খালাস করেছে। ওজন স্লিপে ওজন কমানোর কারণে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের বন্দর স্কেলের ওজন নিশ্চিত হতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠির সঠিক উত্তর না দিয়ে তাদের স্কেলে কাস্টমসের কোনো অফিসার নিয়োগসহ ওজন স্লিপে উভয়ের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওজন নিশ্চিত করতে বলেছে। ওজন স্লিপ নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের জন্য আমরা কমিশনারের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় একটি চিঠি বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল জানান, পণ্য পরীক্ষণের সময় তো কাস্টমস কর্মকর্তারা ডিজিটাল স্কেলে ওজন নিশ্চিত করে থাকেন। আসলে সমস্যা কোথায় হচ্ছে আমার জানা নেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর