দেশের ইতিহাসে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলেম কারাবন্দি রয়েছেন উল্লেখ করে সবার মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা। তা না হলে শাপলা চত্বরে আবারও জমায়েতের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন থেকে এ হঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এতে অংশ নেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা।
শায়খুল হাদীস পরিষদ আয়োজিত সম্মেলন থেকে আগামী ২০ আগস্ট সারাদেশে জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হক।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘মামুনুল হককে মুক্তি না দেয়ার কারণ হলো, সরকার জানে মামুনুল হক যদি রাজপথে তিনদিন থাকেন, সরকারের পতন হবে। এজন্যই সরকার কোনোভাবেই তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। বর্তমানে যত আলেম কারাবন্দি রয়েছেন, ইতিহাসে তা ছিল না।’
এ সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ও টাকা খেয়ে কিছু আলেম সরকারকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। বক্তারা অবিলম্বে এমন আচরণ বাদ দিয়ে তাদের সংশোধন হয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আজ শুধু মামুনুল হক নয়, গোটা দেশের মানুষ জেলে অবস্থান করছে। তাদের মুক্তির জন্য সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যেতে হবে।’ সরকার সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি বেশি কথা বলতে পারেননি। তার বক্তব্য লিখিত আকারে পাঠ করেন তার সহযোগী।
অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, আজকের সম্মেলনের তিন দাবির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে। শান্তিপূর্ণভাবে এ দাবি জানিয়েছে সবাই। তবে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে যে গণবিস্ফোরণ হবে তার দায় সরকাকে নিতে হবে।
সম্মেলনে নেতারা দেশের ইসলামপন্থী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলেমদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। আলেমদের কারামুক্তি ও নির্যাতন বন্ধে রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জাতীয় ও প্রসিদ্ধ আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথাও বলেন তারা।
সম্মেলনে মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ বলেন, আলেম-ওলামাদের মুক্তির ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মুক্তি না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন সংগ্রাম চলবেই। তাদের মুক্তি না দিলে এমন আন্দোলন হবে, সরকার পালানোর পথ পাবে না।
সম্মেলনে জাতীয় শিক্ষা ফোরামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে আতঙ্ক, সে কারণেই তারা মামুনুল হককে বন্দি করে রেখেছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালের মামলায় এখনও নতুন নতুন ব্যক্তিকে মামলায় আটকানো হচ্ছে। এজন্য সব আলেমকে মামলা থেকে মুক্তি ও কারামুক্ত করতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘২০১৩ সালের পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা হয়েছে, তবে তারা একটি কথাও রাখেনি। এজন্য আঙুল বাঁকা করতে হবে, সোজা আঙুলে হবে না। মামুনুল হককে মুক্তির জন্য রাজপথে শুধু রক্ত নয়, কাফনের কাপড় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুজ্জামান মামুন আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানান।