মোটা চাল কেটে-ছেটে মিনিকেট নামে চালিয়ে দেবার দিন বুঝি এবার শেষ। অতি লম্বা ও সরু ধরণের ধান এখন থেকে মাঠেই চাষ হবে। বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ‘বিনা-২৫’ ধান মাঠে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সকল জাতের ধানের বৈশিষ্ট্য সমন্বিত এই ধান আবাদে সুফল পেয়েছে কৃষকরা।
মাঠে কৃষকের হাসি দেখতে কার না ভাললাগে।, ফসল যখন হয় মনমতো। এবার মাগুরার কৃষকরা সন্তুষ্ট চিত্তে ধান ফলিয়েছে। একটি ভালো জাতের ধানের প্রতিক্ষার অবসান হতে চললো। মাঠ পর্যায়ে এবারই প্রথম ফলল ‘বিনা-২৫’ ধান।
২২টি জেলায় একসঙ্গে বীজ উৎপাদন শেষে চাষাবাদ হয়েছে। পরীক্ষাগার থেকে ভালো ফলন মিলেছে মাঠে। মাঠের তথ্য হলো, একরে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ টন আর সর্বনিম্ন ফলন সাড়ে সাত টন।
কৃষকরা জানান, বাঁশমতির মতো এটা লম্বা লম্বা ধান, খেতেও ভালো। সার ও কীটনাশক একেবারেই কম লাগে। লম্বা ধানটা ঝড়েও পড়েনা। খরচ কম, উৎপাদন বেশি।
মাঠে কৃষকের আনন্দের প্রতিচ্ছবি কৃষাণীর চোখে মুখেও। সংসারের দৈন্যতা ঘুচতে চলেছে। বাজারে ভালো দামও মিলবে এবার।
এক সময়ের এক ফসলী জমিতে এবার চার চারটি শস্য চাষ সম্ভব হবে। এমনকি, বৈরি আবহাওয়াতেও উৎপাদনের কোন হের ফের হবে না বিনা-২৫ ধানে।
বিনা-২৫ ধানের উদ্ভাবক ড. সাকিনা খানম বলেন, “শুরুতে জেনিটিক লেবেলে যে পরিবর্তনটা হয়েছে ওটা ওই অবস্থায়ই থাকবে। সুতরাং কৃষক কোম্পানির নির্ভরতা থেকে বেড়িয়ে এটা চাষ করে নিজে খাবে, বিক্রি করবে এবং পরবর্তী বছরের জন্য বীজ সংগ্রহ করবেন।”
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “এখন প্রায় ২৪ লাখ টন চাল আমদানী করতে হয়। সেই জায়গায় সরু চাল প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। সেটা আর আমদানি করতে হবে না, এটা যদি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা যায়।”
মাঠ পর্যায়ে এই ধান পৌঁছালে প্রতিবছর বীজ কেনার ঝক্কি ঝামেলা থাকবে না। কমবে আমদানী নির্ভরতা। কৃষক হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পরের মৌসুমেও ৩শ’ ৯৬টি উপজেলায় চাষাবাদ হবে একযোগে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, “আরও ভালো দিক হলো এটাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ সবচেয়ে কম। সেচে পানির পরিমাণ ও রাসায়নিক সার খুবই কম লাগে। কিন্তু উৎপাদনটা খুব বেশি।”
আগের অবমুক্ত করা জাতগুলো থেকে এই ধানে ১৫ থেকে ২০ ভাগ উৎপাদন বাড়বে বলেও নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা।
নতুন আশা আলো দেখাচ্ছে বীনা-২৫ জাতটি। এটি দেখতে যেমন লম্বা, সরু চাল, গুনে-মানে ভালো। ঠিক তেমনিভাবে কৃষকরা একবার চাষ করলে পরবর্তী বছরে তাদের ধানের বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয়না। সামনের দিনগুলোতে ধানের যে গবেষণা সেখানে এই ধান এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অনেক সহায়ক হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীসহ কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।