ঢাকায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা নেই, সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

আজ শুক্রবার (৫ মে) ভোর ৫ টা ৫৭ মিনিটে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় অনুভূত ভূকম্পনের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর মতে ছিল  ৪ দশমিক.৩।  সংস্থাটির তথ্যমতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলটি ছিল ঢাকা থেকে বিক্রমপুরের দোহারেরে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও এসময় কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।

এদিকে ইউএসজিএসের পর্যবেক্ষণে আসে, এটি ঢাকার ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে দোহারের উত্তর-পশ্চিমে ছিল। এর আগে একই স্থান হতে ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ ৪.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল।

এই বিষয়ে আমাদের সময় ডট কমকে আবওহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, মূলত দুই ধরণের প্লেট থেকে ভূমিকম্প সংগঠিত হয়। একটি ইন্টার ও অন্যটি ইনট্রা প্লেট। ইনটার প্লেট হতে উৎপন্ন ভূমিকম্প প্লেটগুলোর সংযোগস্থলে হয়ে থাকে যা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ ও মাত্রা বেশি। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পটি ইনট্রা প্লেট থেকে সংগঠিত হয়েছে। তবে এটি পূর্ন শক্তি অর্জন করায় ঝাঁকুনির মাত্রা বেশি হলেও অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী ছিল। আর তাই মাত্রাও ছিল কম যা হতে বড় ধরণের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সামান্য। কারণ এতে বড় ধরণের কোনো ফল্ট লাইন নেই।

তাই  আপাতত ‘ প্যানিক’ হওয়ার  কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম।

এদিকে ফের কোনো ভূমিকম্পের শংকা আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে আমাদের সময় ডট কমকে তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘন্টা বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ে বা আগামী ১  মাসের মধ্যে হতে পারে তা বলা যায় না। তবে আফটার শক বলে যেটি আছে তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ইনট্রা প্লেটের ফলে সেটির সম্ভাবনাও কম।

এদিকে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ কোন স্তরে রয়েছে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা মূলত তিনটি টেকটনিক প্লেট পরিবেষ্টিত। একটি নেপালের ইউরোনেশিয়া, অন্যটি ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান ও অপরটি আমাদের দেশ হতে মাত্র ১৫০ কি.মি. পূর্বে মিয়ানমারে অবস্থিত বার্মার মাইক্রো প্লেট। এগুলোর মধ্যে বার্মার প্লেটটি আমাদের জন্য প্রবল ঝুকিপূর্ণ। এতে রয়েছে সেগিং ফল্ট। যা থেকে হতে পারে ভয়াবহ কোন ভমিকম্প।
তবে  ছোট ছোট কয়েকটি ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে ছোট ছোট কয়েকটি সম্পন্ন হওয়ার পরে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিও কমে আসে বলে জানান তিনি।

আরো কোথাও কোনো ফল্ট রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৭১ কিমি দূরে টাংগাইলের মধুপুরে একটি ও নারায়নগঞ্জে আরেকটি হাফ ফল্ট রয়েছে তবে এগুলো ঝুকিপূর্ণ নয় বরং‘ ন্যাশনাল বাউন্ডারির ‘ বাইরে থেকে আঘাত করা ভূমিকম্পগুলো সাধারণত প্রবল ঝুকিপূর্ণ ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। তবে যে কোনো ভূমিকম্পে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর জানিয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন নানা পোস্ট। এসময়  কম্পনের তীব্রতায় অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র বলছে, ঢাকার ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিত ভবনগুলো ধসে পড়ার পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের বিস্ফোরণেও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর