জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সংসদে দেশের বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ উপলক্ষে সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। দেশ স্বাধীনের পরে গঠিত গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। এই ৫০ বছরের পরিক্রমা এবং সেই সময়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বসেছিল প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সময়ের এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা সকল সময় মসৃণ ছিল না। গণতন্ত্রের পথে আমাদের অগ্রযাত্রা যখনই বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তখনই এর একটি প্রভাব পড়েছে জাতীয় সংসদের ওপর। বিগত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে।’
প্রথম সংসদে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের অভাব-অভিযোগ, সুখ-দুঃখ সবকিছুর খবর রাখতেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রয়োজনে তাদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতেন।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ঘটনার বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘আমি একদিন রিকশায় করে সংসদে (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) যাচ্ছি। কিন্তু গেইটে যেতেই নিরাপত্তা প্রহরী রিকশা থামিয়ে দিয়ে বলল, রিকশা ভেতরে যাবে না। কিন্তু গাড়ি ঢুকছে অবলীলায়। নিরাপত্তা রক্ষীকে অনেক যুক্তিতর্ক দিয়েও কাজ না হলে রিকশা ছেড়ে পায়ে হেঁটেই সংসদে প্রবেশ করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করে আমার অধিকার ক্ষুণ্নের একটি নোটিশ জমা দেই। একদিন পরেই তৎকালীন চিফ হুইপ মরহুম শাহ মোয়াজ্জেম আমাকে নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন।’
আমি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কিছুক্ষণ পরেই সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু নিজেই আমাকে ডেকে বললেন, ‘কী রে তোর কী হয়েছে?’ আমি বললাম, গাড়িতে যারা আসেন তাদের যেমন ড্রাইভার নিয়ে আসেন, তেমনি আমাকেও রিকশার ড্রাইভার নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু গাড়ি ঢুকতে কোনো বিধি-নিষেধ না থাকলেও রিকশা নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না, এটাতো ঠিক না। তাই আমি অধিকার ক্ষুণ্নের নোটিশ দিয়েছি এবং আমি প্রত্যাহার করতে চাই না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব শুনে পিঠে একখান কিল মেরে বললেন, ‘আচ্ছা এখন তুই নোটিশ তুইলা ফালা। তোরতো গাড়ি নাই। দেখি কী করা যায়।’ পরে অবশ্য একটা পুরোনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছিল। যদিও সেটি কিনতে এবং মেরামত করতে নতুন গাড়ি কেনার সমানই খরচ হয়েছিল!
সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন- নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, তিন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং মিশন প্রধানেরা।