হলুদ রঙে সেজেছে কিশোরগঞ্জের পল্লিপ্রকৃতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর ও নদীর চর-অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর ফসলের মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। চারদিকে হলুদ গালিচা বিছিয়ে যেন অপরূপ সাজে সেজেছে পল্লিপ্রকৃতি।

এ ফুলের ম-ম গন্ধ আর মৌমাছিদের গুঞ্জরণে মুখর হচ্ছে দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে বাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনা।

প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কৃষকরা অল্প সময়ে ও অল্প খরচে উৎপাদিত বেশি দামে বিক্রিযোগ্য ফসল সরিষা ব্যাপক হারে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

ফসলের বাম্পার ফলনের হাতছানিতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অন্তর্বর্তী সময়ে চাষ করে উপযুক্ত দাম পাওয়ায় কৃষকরা অধিক হারে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।

জানা গেছে, প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষের দিকে চাষ হয় সরিষা ফসল। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এর কর্তন হয়। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে বোরো ফসল কাটা শেষে নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়।

কার্তিক মাসের দিকে পানি সরে গিয়ে আরেকটি বোরো ফসলের মৌসুম শুরুর মাঝ সময়ে চাষ হয় তেলজাতীয় রবি ফসল সরিষা। এ জন্য চাষিরা এ ফসলটিকে ‘ফাউ’ ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাজারে বিক্রির আগেও এ ফসলের ফুল দিয়ে মুখরোচক বড়া ও পাতা দিয়ে মজাদার শাক রান্না করা এবং কাটা শেষে সরিষাগাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এসব বিক্রি করেও মেলে বাড়তি অর্থ।

বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয় সরিষা। কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ব্যাপক হারে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

দেশের অন্যতম সরিষা ফসল উৎপাদনকারী হাওর-অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জে জেলার ফসলের মাঠে মাঠে এখন হলুদ সরিষা ফুলের হাসি। যেদিকেই তাকানো যায়, মনে হয় হলুদ রঙের গালিচায় ছেয়ে আছে এখানকার মাঠঘাট। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য ভিন্ন রকম দোলা দিয়ে যায় গ্রামবাংলার মানুষের মনে।

তাই কাব্য ও সাহিত্যে হেমন্ত প্রকৃতিবন্দনায় উপমা হয়ে উঠে আসে সরিষা ফুলের নাম। তাই প্রকৃতির এ মনোলোভা সৌন্দর্য উপভোগে সরিষা ফসলের মাঠে ভিড় জমে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলায় ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন। তবে বাম্পার ফলনের হাতছানি থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

মো. ছাইফুল আলম, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কিশোরগঞ্জ

সরেজমিন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর জারুইতলা ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ফসলের মাঠ পরিদর্শনকালে কথা হয় গ্রামের সুরুজ আলী, ইন্নছ মিয়া ও আবদুল কুদ্দুছ নামে তিন সরিষা চাষির সঙ্গে।

তারা অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা অল্প সময়ে ও অল্প খরচে উৎপাদিত বেশি দামে বিক্রিযোগ্য ফসল সরিষা ব্যাপক হারে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তারা আরও জানান, এ সময়টিতে অন্য কোনো ফসল চাষ করা হয় না বলে এ ফসলটিকে বিবেচনা করে থাকেন তারা। আর এ ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচ জোগানের পাশাপাশি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষেও ব্যয় করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলায় ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন। তবে বাম্পার ফলনের হাতছানি থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর