স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে সংসদে সাধারণ প্রস্তাব

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে সংসদে সাধারণ প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এদিনটিতে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ ও তাঁর আদর্শ ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত শপথ গ্রহণে এ সাধারণ প্রস্তাবটি তোলা হয়।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ১৪৭ বিধির এ প্রস্তাবটি সংসদে তুলেছেন। প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে তা গ্রহণ করা হবে।

সংসদে তোলা প্রস্তাবটি হলো—’সংসদের অভিমত এই যে, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক বিশেষ মহিমান্বিত দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। পাকিস্তানের শাসন-শোষণ ও অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জীবনের একটি বড় সময় জেল, জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলে ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় এবং ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর পরই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। এ সময় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রেখে তাঁর উপর নির্যাতন চালানো হয়। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার নানা পরিকল্পনা করে। জেলের মধ্যে অত্যাচার নির্যাতনই শুধু নয়, তাকে ফাঁসির মঞ্চেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ও তাঁর অদম্য সাহসের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও নির্দেশিত পথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লী হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিনের অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন অগণিত জনতা মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ও গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্বাগত জানান প্রিয় নেতাকে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান)। সেখানে লাখো মানুষের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং দেশকে গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ওই দিন দেশে ফিরে এসে তিনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের মূল ভিত রচনা করেন। বাঙালি জাতির জীবনে ১০ জানুয়ারি একটি বিশেষ তাৎপর্যবহ দিন। এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে, তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হোক।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর