হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রামের ধানক্ষেতই যেন খেলার মাঠ। মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে একটি জায়গা চিহ্নিত করা। মানুষজন গোল হয়ে বসা, কেউ বা দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি সবার এক দিকেই। মাঠের মাঝখানে চিহ্নিত স্থান দিয়ে প্রাণপণে ছুটছে ঘোড়া। পিঠে সওয়ারি থামলেই চাবুকের ঘা। ছুটছে ঘোড়া ঘুরে ঘুরে। উপস্থিত দর্শকরা হর্ষধ্বনি ও তালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে সওয়ারিদের।
এই চিত্র হলো নওগাঁ পৌরসভার পার-নওগাঁ মণ্ডলপাড়া এলাকায় ফসলি জমির মাঠে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার। আজ শুক্রবার বিকেলে পার-নওগাঁ নবতরুণ সংসদ বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। হাজার হাজার দর্শক এই ঘোড়দৌড় উপভোগ করেন।
প্রতিযোগিতায় ক-গ্রুপ থেকে প্রথম হয় সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থেকে আসা মামুন খানের ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে বগুড়ার ধুনট থেকে আসা ফরহাদ হোসেনের ঘোড়া আর তৃতীয় হয়েছে ধুনটের আলী হোসেনের ঘোড়া। খ গ্রুপ থেকে প্রথম হয়েছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফারুক হোসেনের ঘোড়া, নওগাঁর ধামইরহাটের মাহাবুবের ঘোড়া দ্বিতীয় এবং সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা এলাকার মিলনের ঘোড়া হয়েছে তৃতীয়। গ গ্রুপ থেকে প্রথম হয়েছে বগুড়ার শেরপুরের নাহিদ হোসেনের ঘোড়া, ধামইরহাটের বাচুচুর ঘোড়া দ্বিতীয় আর বগুড়ার ধুনটের রনির ঘোড়া তৃতীয় হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রতিটি গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারীকে টেলিভিশন, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে স্মার্ট ফোন এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীকে রাইস কুকার উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীকে এক হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়।
আজ বিকেল ৩টায় এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তার আগেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করে স্থানীয় লোকজন। খেলা শুরুর আগেই পার-নওগাঁ মণ্ডলপাড়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এ প্রতিযোগিতা শেষ হয় ৫টায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
পার-নওগাঁ নবতরুণ সংসদের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবতরুণ সংসদের সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারওয়ার তানজিদ সম্রাট, সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ সদর মডের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর গফুর মানজার, সাংবাদিক আসাদুর রহমান জয়, মামুনুর রশীদ বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলা ও পাশে বগুড়া, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ৫৪টি ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন সৌখিন ঘোড়াপ্রেমীরা। তাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই ঘোড়া পোষেন। যেখানেই খেলা হয়, সেখানেই তাঁরা ঘোড়া নিয়ে ছুটে যান।
নওগাঁর ধামইরহাট থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন ওবায়দুল হক। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন তাঁর মেয়ে ঘোড়সওয়ার কিশোরী তাসমিনা আক্তার। ওবায়দুল হক বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছি। যেখানে ঘোড়া দৌড়ের খবর পাই, সেখানেই ছুটে যাই। আয়োজকরাও খবর দেন। এটা আমার একটা শখ। আমার মেয়ে তাসমিনারও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা শখ। পেপার-পত্রিকার কল্যাণে সারা দেশের মানুষ তাঁর নাম জানে। এবার সে এসএসসি পাস করেছে।’
আয়োজক সংগঠন পার-নওগাঁ নবতরুণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার তানজিদ সম্রাট বলেন, ‘এলাকার তরুণ ও যুবকদের নির্মল বিনোদন দিতে এবং তাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। পাঁচ বছর ধরে ছোট যমুনা নদীতে সংগঠনের উদ্যোগে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন হয়ে আসছে। এবার গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। স্থানীয় লোকজন এই খেলা দেখে বেশ খুশি। আগামীতেও এ ধরনের আয়োজন করা হবে।’