হাওর বার্তা ডেস্কঃ তরুণ এই কৃষক বলেন, এক সময় স্বর্ণা ধান চাষ করতাম। কিন্তু স্বর্ণা ধান বেশ মোটা। ফলনও কম। রোগে আক্রান্ত হয়। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার ব্রি ধান-৮৭’র আবাদ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের কয়েক জনের দেখাদেখি এই এলাকার প্রায় সবাই এবার ব্রি ধান-৮৭ আবাদ করেছেন। আর ফলন ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। তিনি বলেন, এই ধানের চাল বেশ চিকন। তিনি এবার প্রতি মণ ব্রি-৮৭ ধান ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে জানালেন। এই এলাকার আরেক কৃষক জামাত প্রামাণিক বলেন, এক সময় আম বাগান সারা বছর খালি পড়ে থাকতো। কিন্তু এখন আম বাগানেই ব্রি-৮৭’র আবাদ করছি। তিনি বলেন, এই ধানের গাছ বেশ শক্ত হওয়ায় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমের পাশাপাশি ধানও পাওয়া যাচ্ছে। কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ব্রি-৮৭ ধানের জীবনকাল কম হওয়ায় তিনি এই ধান আবাদ করে একই জমিতে অন্য ফসলও করতে পারছেন। এ বিষয়টাই তার কাছে সবচেয়ে বেশি লাভজনক মনে হচ্ছে।
ব্রি’র রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ফজলুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে ৮৩৭টি ব্লক আছে। প্রতিটি ব্লকে এক বিঘা করে জমিতে প্রদর্শনী করার জন্য বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছে সরকার। সেইসঙ্গে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। ব্রি’র এই মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আমন ধান ব্রি-৮৭ আবাদ করার পর কৃষকরা এই জমিতে রবিশস্য সরিষা, মসুর ও আলু চাষ করতে পারবেন। এরপর এখানেই বোরো আবাদ করতে পারবেন। তার মানে, চাষের জন্য আমনের জাতটা নির্বাচন করা কৃষকের জন্য খুবই জরুরি। আমন জাত নির্বাচন সঠিক হলে একজন কৃষক একই জমিতে তিন বার ফসল করতে পারবেন। এতে কৃষক লাভবান হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমন ব্রি-৮৭ ধান আবাদ করতে কৃষকের ১২৫ দিন লাগবে। এরচেয়ে কম সময়ে আর কোনো আমন আবাদ করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত ১০৮টি জাতের মধ্যে অনেকগুলোই উচ্চ ফলনশীল। তিনি বলেন, জীবনকাল কম হওয়ায় ও ফলন বেশি হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি—৮৭ ধানটির আবাদ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষিবিভাগ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ব্রি’র আরো তিনটি জাত উন্মুক্ত হবে বলে তিনি জানান। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় আমরা ব্রি-৮৭ ধানের আবাদ বাড়াতে কাজ করছি। এ ধান চাষ করতে পারলে একই জমি থেকে ধান উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।