ঢাকা ০৩:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল-জোয়ালের সোনালি অধ্যায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • ১৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গলা ফাটিয়ে গান গেয়ে জমিতে লাঙল চালিয়ে চাষাবাদের সেই দৃশ্যের দেখা পাওয়া আজ বড়ই দুষ্কর। হয়তো একদিন গ্রামবাংলার এই হালচাষ পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই শোনাবে,সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ ঐতিহ্যর মধ্য হারিয়ে যেতে বসেছে মানব সভ্যতার সোনালি অতীত বীর বাঙালির চিরচেনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল চাষ তথা লাঙল জোয়াল।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা, কনকদিয়য়া, কাছিপাড়া, কালিশুরি বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়- ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল চাষ অনেকটা কম। নেই বললেই চলে।

এ বিষয়ে বগা ইউনিয়নের বংশ পরম্পরায় প্রবীণ কৃষক রাজেক রাড়ী বলেন, আমার বাপ-দাদারা বড় বড় গরু-মহিষ দিয়া আগে আল চাষ (হাল চাষ) করতেন, বাড়িতে আল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া। জমি চোয়ার (চাষের) জন্য লাগতে এক জোড়া বলদ, কাডের তৈরি লাঙল, বাঁশের তৈরি জোয়াল, মই, বাঁশ দিয়ে তৈরি গরুর মুখে তুরি এইসব। তা এহোন আর নাই। আমি এখনো মাঝে মাঝে টুকটাক করি, কারণ বইয়া থাকতে ভালো লাগে না, সময় মতো মেশিন পাই না তাই বীজ ভুঁই (জমিন) গরু দিয়া একটু চাষ করি। এহোনতো মানষে হগোল কাম মেশিন দিয়াই করে।

কালিশুরির কৃষক মোশারেফ মৃধা বলেন- আগে ফজরের নামাজ পরে গরু নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে জমির দিকে গেলেই দেখা যেত অনেক কৃষক। কিন্তু আস্তে আস্ত ট্রাক্টর আওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। আগে বাড়িতে মানষে গরু-মহিষ দিয়া ধান মাড়াই করত। এহোন ডিজিটাল মাড়াই মিশিন দিয়া লয়। হেই আগের মানুও নাই যে হাল চাষ করবে, আমার নিজের জমি মেসিন দিয়া চোয়াই আর মাড়াই মিশিন দিয়া ধান লই।

দিন দিন নতুন কৃষি যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে সারাদেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের বাঙালির চিরচেনা সেই গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। তাই আর সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না কৃষকদের। গরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়। আগেরকার সময় গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন অনেকে, ধান, ডাল, তিল, বাদাম, মরিচ, আলু চাষের জন্য ব্যবহার করতেন। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন।

 

 

গরু দিয়ে হাল চাষ গ্রামীণ সমাজের কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হত। গরু দিয়ে চাষ করার সময় গরুর গোবর জমিতেই পরতো তাতে জৈবসার হতো, জমির ফসল ভালো হতো জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক কম লাগতো। দিনদিন ধীরে ধীরে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে মানব সভ্যতার সোনালি অতীত লাঙল-জোয়াল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল-জোয়ালের সোনালি অধ্যায়

আপডেট টাইম : ১২:০১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গলা ফাটিয়ে গান গেয়ে জমিতে লাঙল চালিয়ে চাষাবাদের সেই দৃশ্যের দেখা পাওয়া আজ বড়ই দুষ্কর। হয়তো একদিন গ্রামবাংলার এই হালচাষ পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই শোনাবে,সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ ঐতিহ্যর মধ্য হারিয়ে যেতে বসেছে মানব সভ্যতার সোনালি অতীত বীর বাঙালির চিরচেনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল চাষ তথা লাঙল জোয়াল।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা, কনকদিয়য়া, কাছিপাড়া, কালিশুরি বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়- ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল চাষ অনেকটা কম। নেই বললেই চলে।

এ বিষয়ে বগা ইউনিয়নের বংশ পরম্পরায় প্রবীণ কৃষক রাজেক রাড়ী বলেন, আমার বাপ-দাদারা বড় বড় গরু-মহিষ দিয়া আগে আল চাষ (হাল চাষ) করতেন, বাড়িতে আল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া। জমি চোয়ার (চাষের) জন্য লাগতে এক জোড়া বলদ, কাডের তৈরি লাঙল, বাঁশের তৈরি জোয়াল, মই, বাঁশ দিয়ে তৈরি গরুর মুখে তুরি এইসব। তা এহোন আর নাই। আমি এখনো মাঝে মাঝে টুকটাক করি, কারণ বইয়া থাকতে ভালো লাগে না, সময় মতো মেশিন পাই না তাই বীজ ভুঁই (জমিন) গরু দিয়া একটু চাষ করি। এহোনতো মানষে হগোল কাম মেশিন দিয়াই করে।

কালিশুরির কৃষক মোশারেফ মৃধা বলেন- আগে ফজরের নামাজ পরে গরু নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে জমির দিকে গেলেই দেখা যেত অনেক কৃষক। কিন্তু আস্তে আস্ত ট্রাক্টর আওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। আগে বাড়িতে মানষে গরু-মহিষ দিয়া ধান মাড়াই করত। এহোন ডিজিটাল মাড়াই মিশিন দিয়া লয়। হেই আগের মানুও নাই যে হাল চাষ করবে, আমার নিজের জমি মেসিন দিয়া চোয়াই আর মাড়াই মিশিন দিয়া ধান লই।

দিন দিন নতুন কৃষি যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে সারাদেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের বাঙালির চিরচেনা সেই গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। তাই আর সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না কৃষকদের। গরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়। আগেরকার সময় গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন অনেকে, ধান, ডাল, তিল, বাদাম, মরিচ, আলু চাষের জন্য ব্যবহার করতেন। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন।

 

 

গরু দিয়ে হাল চাষ গ্রামীণ সমাজের কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হত। গরু দিয়ে চাষ করার সময় গরুর গোবর জমিতেই পরতো তাতে জৈবসার হতো, জমির ফসল ভালো হতো জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক কম লাগতো। দিনদিন ধীরে ধীরে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে মানব সভ্যতার সোনালি অতীত লাঙল-জোয়াল।