হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রথমে বিবস্ত্র করে স্ত্রীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন স্বামী ইয়াসিন আকন। সেই ভিডিও নেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পরকীয়ার মিথ্যা স্বীকরোক্তি আদায় করে তা রেকর্ড করেন। এর পরই শুরু করেন শারীরিক নির্যাতন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ত্রী মিম আক্তারের (১৮) শরীরের কোথাও মারতে বাদ রাখেননি পাষণ্ড স্বামী।
কালো ছোপ ছোপ দাগ তার সমস্ত শরীরে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন এই গৃহবধূ।
নির্যাতনের দুদিন পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফোন করে তাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন ইয়াসিন। পরে পরিবারের লোকজন শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়ি থেকে মিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। মধ্যযুগীয় বর্বরতার এই ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (২০ সেপ্টম্বর) দিবাগত রাতে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামে।
নির্যাতরে শিকার মিম আক্তার ও তার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবি করে আসছিলেন ইয়াসিন। তার দাবীকৃত দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় পরকীয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই নির্যাতন করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের মালেক বেপারীর মেয়ে মিম আক্তারের সঙ্গে রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের সুলতান আকনের ছেলে ইয়াসিন আকন (২৮) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ক মেনে নেয় নি মিমের পরিবার। একপর্যায়ে সম্পর্কের ১১মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন মিম।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মিম আক্তার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিন বছর আগে প্রেম করে পরিবারের অমতে ইয়াসিনকে বিয়ে করি। আমার স্বামী কার্গো জাহাজে (লাইটার জাহাজ) চাকরি করে। সে কারণে দুই-তিন মাস পর পর বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসেই ব্যাংকে আমার নামে বাবার জমা রাখা দুই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে শারীরিক নির্যাতন করত। ঘটনার দিন বুধবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে জাহাজ থেকে বাড়িতে আসে। ওই রাতে এসেই আমার বিরুদ্ধে পরকীয়ার মিথ্যা অভিযোগ তোলে। এর পর আমাকে বিবস্ত্র করে তা মোবাইলে ভিডিও করে। সেই ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার মুখ থেকে জোরপূর্বক পরকীয়ার স্বীকারোক্তি আদায় করে তা রেকর্ড করে।
মিম আক্তার বলেন, সব কিছু ভিডিও করার পর ইয়াসিন (স্বামী) আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে মোটা রশি দিয়ে চাবুক বানিয়ে পেটাতে থাকে।
নির্যাতনের শিকার মিম আরো বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে তার প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক আছে। সেই দোষ ঢাকতে উল্টো আমার নামে পরকীয়ার অভিযোগ করছে।
মিমের বাবা আ. মালেক বেপারী বলেন, আমরা আগে থেকেই ইয়াসিনের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানি। সে কারণেই ওর সঙ্গে বিয়েতে আমরা রাজি ছিলাম না। বিয়ের আগেই মেয়ের নামে আমি দুই লাখ টাকা ব্যাংকে রেখেছি। সেটা জানতে পেয়ে ইয়াসিন সেই টাকার চেয়ে মেয়েকে বারবার নির্যাতন করে চলেছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।
মিমের স্বামী মো. ইয়াসিন আকনের কাছে জানতে চাইলে স্ত্রীকে মারধর ও নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার স্ত্রী অন্য এক ছেলের সঙ্গে পরকীয়া করে। আমার কাছে সে স্বীকার করেছে পরকীয়ার কথা। তবে আমার বিরুদ্ধে যৌতেুক এবং ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ববি সাহা বলেন, মিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাঁধাসহ মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন বলেন, নারী নির্যাতনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।