ঢাকা ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

একটি স্বর্গোদ্যান ও “চিনি মা” ——-সোনম মনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০১৬
  • ৩৭২ বার

দিনের সমস্ত কাজ শেষে, রাত নিশিথে, হারিকেনের টিমটিমা আলোয়, শরৎ চন্দ্র বা সমরেশ বসুর একখানা বই হাতে নিয়ে মা আমার পড়ায় মজে যেতেন । ভীষন মন্ত্রমুগ্ধের মতন নেশা ছিলো বই পড়ার। মনে পরে, মাকে রবিঠাকুরের কবিতা আবৃতি করে শোনাতেন আমার বড় ভাই ,অতি অল্প বয়সেই শুনে শুনেই মুখস্হ আমার, “বর্গা ঠুকাঠুকি করিতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে” ।“দুই বিঘা জমি” আর মঞ্জলিকার বাবার কথা সেই অনেক ছোট বেলায় শুনে শুনে জেনেছিলাম।সব মাকে পড়ে শুনাতেন বড় ভাই। মা এখনো খবরের কাগজ পড়েন, বড় মনোযোগ দিয়ে। বেশী পড়তে গেলে মাথা ব্যাথা হয় কখনো কখনো ।উনি এখন অক্টোজেনারিয়ান। আমার মায়ের একটি আদুরে নাম আছে, মায়ের এই নামটি কি যে মধুর,কি যে মমতার, মায়ের বাড়ীর সবার কাছে, আর আমাদের কাছেও বড়ই আদুরে। আমার নানীর অতি আদরে দেয়া সেই নাম-“চিনি মা” ।।নানী ছিলেন আমার অতি প্রিয় একজন মানুষ। । মাঝে মাঝে নানীর মতন লাগে আমাকে আয়নায় এখনো।
আমার মায়ের কোন একাডেমীক শিক্ষা ছিলো না।তবে উনার টাইটেল পাশ মাওলানা (দেউবন্দী)অধ্যাপক, বাবা, উনাকে বাড়ীতেই কিতাব কোরআন পড়িয়েছেন অতি মাত্রায়। বাংলা, আরবী, ফার্সী এবং উর্দূত ভাষা ও শিখিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় বাবা(আমার নানা) কবে ওয়াজ করতে যাবেন সেই অপেক্ষা করতেন, তাহলে পড়া থেকে কিছুটা পরিত্রান পাবেন,এই ভেবে । পাঁচ ভাই ও তিন বোন আমার মায়ের। মা কনিষ্ঠা কন্যা!আমার মা উনার বাবার কাছে অনেক পড়েছেন বলেই এই পড়ার অভ্যাসটা গেঁথে গ্যাছে স্বভাবে।ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে না, “ওল্ড হ্যাবিট ডাই হার্ড।”

মিটামইন আমার জন্মস্হান,এইতো কদিন আগে মাত্র, সুইচ টিপে সবাই ঘরে বাতি জ্বালালো।মিটামইনের ক্ষণজন্মা সেই বীর পুরুষ, এই বর্ষায় ডুবে যাওয়া দ্বীপের জন্য তার জীবনে কি না করেছেন!মিটামইনের সকল দিকেই মাঠ ,যাকে বলে হাওর, সুদিন কালে স্হল ভাগ বিস্তর। বর্ষা কালে এই বিস্তর মাঠ গুলো বর্ষার পানিতে পানিতে সয়লাব হয়ে সমুদ্রের আকার ধারন করে, তাই আমার কাছে যে কোন সাগর যেন পূর্ব পরিচিত এক জীবনের অধ্যায়। লন্ডনের সাউথ কোষ্টে আমার বাড়ীর পাশেই সাগর। পাথর্ক্য আমাদের মিটামনের বর্ষার পানি ছিলো মিঠা, আর সাগরের জল নোনা।স্বাদ নেবার পূর্ব পর্যন্ত দুটোই এক।

প্রসঙ্গ আমার মিটামইন আর ইংলিশ চ্যানেলের জল নয় আজ ,আমার শৈশবের মুক্ত আঙ্গিনার কথা মনে পড়েছে বলে কথা গুলো বলছি, কতটা স্বাধীন কতটা সম অধিকার পেয়ে বাবা মায়ের ঘরে আমরা লালিত-পালিত হয়েছি। যেহেতু আমার বাবার কোন বোন ছিলো না তাই আমাদের পাঁচ বোন হওয়াতেও বাবা বড় সুখী ছিলেন। তাছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব বাবার কাছে মেয়েরা সব সময়ই আদুরে ।সাধারনত ছেলে থাকলে মেয়েদের আদর একটু কম হয় মায়েদের কাছে, এ জায়গাটিতেই আমার মহিয়ষী মা ছিলেন ব্যতিক্রম ধর্মী। আমার মা তার প্রত্যেক সন্তান যেন ঠিক মত পড়াশুনা করে তার জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন। আমি আমার মায়ের তৃতীয় মেয়ে , সন্তানদের মাঝে যদিও পঞ্চম । আমি বরাবর ভালো ছাত্রী ছিলাম মায়ের মতে, আমার মা আমাকে তার ছেলেদের চেয়েও বেশী আদরে মনে হয় শৈশবে লালন পালন করেছেন। সেই কারনেই মাকে খুশী রাখার একটা দূর্বার চেষ্টা সব সময় আমার মাঝে কাজ করতো। আমার শ্রদ্ধেয় দুই ভাই, পাঁচ বোনেরই বড়।ছোট্ট ভাইটি হলো আমাদের সবার ছোট, পাঁচটি বোনেই “চোখের মনি”। বাবা মায়ের গড়া একটি “স্বর্গ উদ্যান” ছিলো আমার বাবা-মায়ের সংসার। স্বর্গে যেমন ভেদাভেদ থাকবে না, আমাদের পরিবারটিতেও তা ছিলো না। সেই কারনেই একটি অজপাড়াগাঁ থেকে আমরা সবগুলো ভাইবোন সর্বোউচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পেড়েছিলাম।আমার মায়ের সুযোগ্য সন্তান আমার বড় ভাই, যার ঐকান্তিক চেষ্টা মা বাবার ইচ্ছে ফুল ফোটাতে যারপরন্যায় সহায়ক হয়েছে ।আমার মা বাবার মতন অমন প্রগতিশীল বাবা-মা সবার ভাগ্যে হয় না, সেই দিক খেকে আমরা ভাইইবোনেরা বড় ভাগ্যবান। ।মায়ের যুগেও মেয়েরা বাংলাদেশে সকল স্হানে স্কুল কলেজে তেমন পড়তো না । মায়ের প্রায় সকল ভ্রাতাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত।উনারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন ।একজন সুশিক্ষিত মা যদি তার সন্তানদের সমান অধিকার দিয়ে লালন পালন করেন তবে ই পরবর্তী প্রজন্ম তার সুফল ভোগ করতে পারে। আমার মা তার জ্বলন্ত প্রমান।

আমি একজন মা হিসেবে আমার সন্তানদের তাই দিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।সত্যি বলতে কি আমার বাবা-মায়ের মতন একটি “স্বর্গউদ্যান”, সংসার জীবনে গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা করে যাই আমি নিত্যদিন।যেখানে টাকা নয়, পয়সা নয় একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসায় গড়ে উঠে মধুময়কুঞ্জ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

একটি স্বর্গোদ্যান ও “চিনি মা” ——-সোনম মনি

আপডেট টাইম : ০৫:১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০১৬

দিনের সমস্ত কাজ শেষে, রাত নিশিথে, হারিকেনের টিমটিমা আলোয়, শরৎ চন্দ্র বা সমরেশ বসুর একখানা বই হাতে নিয়ে মা আমার পড়ায় মজে যেতেন । ভীষন মন্ত্রমুগ্ধের মতন নেশা ছিলো বই পড়ার। মনে পরে, মাকে রবিঠাকুরের কবিতা আবৃতি করে শোনাতেন আমার বড় ভাই ,অতি অল্প বয়সেই শুনে শুনেই মুখস্হ আমার, “বর্গা ঠুকাঠুকি করিতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে” ।“দুই বিঘা জমি” আর মঞ্জলিকার বাবার কথা সেই অনেক ছোট বেলায় শুনে শুনে জেনেছিলাম।সব মাকে পড়ে শুনাতেন বড় ভাই। মা এখনো খবরের কাগজ পড়েন, বড় মনোযোগ দিয়ে। বেশী পড়তে গেলে মাথা ব্যাথা হয় কখনো কখনো ।উনি এখন অক্টোজেনারিয়ান। আমার মায়ের একটি আদুরে নাম আছে, মায়ের এই নামটি কি যে মধুর,কি যে মমতার, মায়ের বাড়ীর সবার কাছে, আর আমাদের কাছেও বড়ই আদুরে। আমার নানীর অতি আদরে দেয়া সেই নাম-“চিনি মা” ।।নানী ছিলেন আমার অতি প্রিয় একজন মানুষ। । মাঝে মাঝে নানীর মতন লাগে আমাকে আয়নায় এখনো।
আমার মায়ের কোন একাডেমীক শিক্ষা ছিলো না।তবে উনার টাইটেল পাশ মাওলানা (দেউবন্দী)অধ্যাপক, বাবা, উনাকে বাড়ীতেই কিতাব কোরআন পড়িয়েছেন অতি মাত্রায়। বাংলা, আরবী, ফার্সী এবং উর্দূত ভাষা ও শিখিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় বাবা(আমার নানা) কবে ওয়াজ করতে যাবেন সেই অপেক্ষা করতেন, তাহলে পড়া থেকে কিছুটা পরিত্রান পাবেন,এই ভেবে । পাঁচ ভাই ও তিন বোন আমার মায়ের। মা কনিষ্ঠা কন্যা!আমার মা উনার বাবার কাছে অনেক পড়েছেন বলেই এই পড়ার অভ্যাসটা গেঁথে গ্যাছে স্বভাবে।ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে না, “ওল্ড হ্যাবিট ডাই হার্ড।”

মিটামইন আমার জন্মস্হান,এইতো কদিন আগে মাত্র, সুইচ টিপে সবাই ঘরে বাতি জ্বালালো।মিটামইনের ক্ষণজন্মা সেই বীর পুরুষ, এই বর্ষায় ডুবে যাওয়া দ্বীপের জন্য তার জীবনে কি না করেছেন!মিটামইনের সকল দিকেই মাঠ ,যাকে বলে হাওর, সুদিন কালে স্হল ভাগ বিস্তর। বর্ষা কালে এই বিস্তর মাঠ গুলো বর্ষার পানিতে পানিতে সয়লাব হয়ে সমুদ্রের আকার ধারন করে, তাই আমার কাছে যে কোন সাগর যেন পূর্ব পরিচিত এক জীবনের অধ্যায়। লন্ডনের সাউথ কোষ্টে আমার বাড়ীর পাশেই সাগর। পাথর্ক্য আমাদের মিটামনের বর্ষার পানি ছিলো মিঠা, আর সাগরের জল নোনা।স্বাদ নেবার পূর্ব পর্যন্ত দুটোই এক।

প্রসঙ্গ আমার মিটামইন আর ইংলিশ চ্যানেলের জল নয় আজ ,আমার শৈশবের মুক্ত আঙ্গিনার কথা মনে পড়েছে বলে কথা গুলো বলছি, কতটা স্বাধীন কতটা সম অধিকার পেয়ে বাবা মায়ের ঘরে আমরা লালিত-পালিত হয়েছি। যেহেতু আমার বাবার কোন বোন ছিলো না তাই আমাদের পাঁচ বোন হওয়াতেও বাবা বড় সুখী ছিলেন। তাছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব বাবার কাছে মেয়েরা সব সময়ই আদুরে ।সাধারনত ছেলে থাকলে মেয়েদের আদর একটু কম হয় মায়েদের কাছে, এ জায়গাটিতেই আমার মহিয়ষী মা ছিলেন ব্যতিক্রম ধর্মী। আমার মা তার প্রত্যেক সন্তান যেন ঠিক মত পড়াশুনা করে তার জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন। আমি আমার মায়ের তৃতীয় মেয়ে , সন্তানদের মাঝে যদিও পঞ্চম । আমি বরাবর ভালো ছাত্রী ছিলাম মায়ের মতে, আমার মা আমাকে তার ছেলেদের চেয়েও বেশী আদরে মনে হয় শৈশবে লালন পালন করেছেন। সেই কারনেই মাকে খুশী রাখার একটা দূর্বার চেষ্টা সব সময় আমার মাঝে কাজ করতো। আমার শ্রদ্ধেয় দুই ভাই, পাঁচ বোনেরই বড়।ছোট্ট ভাইটি হলো আমাদের সবার ছোট, পাঁচটি বোনেই “চোখের মনি”। বাবা মায়ের গড়া একটি “স্বর্গ উদ্যান” ছিলো আমার বাবা-মায়ের সংসার। স্বর্গে যেমন ভেদাভেদ থাকবে না, আমাদের পরিবারটিতেও তা ছিলো না। সেই কারনেই একটি অজপাড়াগাঁ থেকে আমরা সবগুলো ভাইবোন সর্বোউচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পেড়েছিলাম।আমার মায়ের সুযোগ্য সন্তান আমার বড় ভাই, যার ঐকান্তিক চেষ্টা মা বাবার ইচ্ছে ফুল ফোটাতে যারপরন্যায় সহায়ক হয়েছে ।আমার মা বাবার মতন অমন প্রগতিশীল বাবা-মা সবার ভাগ্যে হয় না, সেই দিক খেকে আমরা ভাইইবোনেরা বড় ভাগ্যবান। ।মায়ের যুগেও মেয়েরা বাংলাদেশে সকল স্হানে স্কুল কলেজে তেমন পড়তো না । মায়ের প্রায় সকল ভ্রাতাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত।উনারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন ।একজন সুশিক্ষিত মা যদি তার সন্তানদের সমান অধিকার দিয়ে লালন পালন করেন তবে ই পরবর্তী প্রজন্ম তার সুফল ভোগ করতে পারে। আমার মা তার জ্বলন্ত প্রমান।

আমি একজন মা হিসেবে আমার সন্তানদের তাই দিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।সত্যি বলতে কি আমার বাবা-মায়ের মতন একটি “স্বর্গউদ্যান”, সংসার জীবনে গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা করে যাই আমি নিত্যদিন।যেখানে টাকা নয়, পয়সা নয় একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসায় গড়ে উঠে মধুময়কুঞ্জ।