পদ্মা-যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ছে মধ্যাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এবার দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি স্থিতিশীল থাকলেও এবার বাড়ছে- পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে আসামে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এতে করে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। গত তিন-চার দিনে পদ্মা ও যমুনার পানি বেড়েছে ১০০ সেন্টিমিটার।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা এবং যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর এসব জেলার নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল এসব জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর এসব জেলার চরাঞ্চল ডুবেছে এবং তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারতের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ হাওরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টা ভারতের সিকিম, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ২ দশমিক ১১ মিটার। আকস্মিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের অন্তত ৯৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় কৃষককে জমি থেকে পাকাআধা পাকা ইরি ধান ও বাদাম কেটে ফেলতে হচ্ছে। পানি বেড়ে যাওয়া সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি ডুবেছে চরভদ্রাসন উপজেলায়। এই উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৫১ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭ হেক্টর জমির চীনা বাদাম, ৭ হেক্টর বোরো ধান ও ১১ হেক্টর বোনা আউশ, ৮ হেক্টর ভুট্টা ও ৮ হেক্টর জমির তিল ডুবে গেছে। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নাড়কের বাড়িয়া ইউনিয়নের ২২ হেক্টর জমির চীনা বাদাম তলিয়ে গেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থপ্রতীম সাহা বলেন, পদ্মায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ২ মিটার পানি বেড়েছে। এ সময়ে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি আকস্মিক। ভারত ও চীনে ব্যাপক বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনায় গত ১ সপ্তাহে পানি বেড়েছে ৩ মিটার। এর প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়েছে।
যমুনা নদীর পানিও গত কয়েকদিন যাবত দ্রæত বাড়ছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। জেলার শাহজাদপুর উপজেলার নদী-তীরবর্তী জালালপুর গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি এরই মধ্যে নদীতে তলিয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে শাহজাদপুর, চৌহালির নদী-তীরবর্তী বাড়িঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গতকালও যমুনার পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যমুনার পানি বর্তমানে বিপদসীমার (১৩ দশমিক ৩৫ মিটার) ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে দ্রæত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
পদ্মা-যমুনার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় আরিচা পয়েন্টে ১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিবালয় উপজেলার নদী তীরবর্তীর জাফরগঞ্জ, ধুসর, বাশাইল, তেওতা, বোয়ালী উথলী, নবগ্রাম, হাজিরবাঁধা, অন্বয়পুর, নালী প্রভৃতি এলাকার চকে আবাদকৃত উঠতি বোরো ধান তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক নিরুপায় হয়ে আধাপাকা ধান কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক পুকুরের মাছ বেরিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিস্তা ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা এসব জেলার নিম্নাঞ্চলের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর