আমরা মরতে বসেছি খাবারের জন্য শ্রীলঙ্কানদের আকুতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কায় কৃষকদের জন্য আগামী কৃষি মৌসুমে যথেষ্ট পরিমাণ সার আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে এবারের মৌসুমের জন্য কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। বরং চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে দেশটিতে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

গত বছরের এপ্রিলে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করার পর শ্রীলঙ্কায় ফসল উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলশ্রুতিতে অমূল্য বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চাল আমদানি করতে হয় তাদের। যদিও পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, তবে সার আমদানি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এবারের ইয়ালা (মে-আগস্ট) মৌসুমে সার সংগ্রহের সময় নাও পাওয়া যেতে পারে, তবে মহা (সেপ্টেম্বর-মার্চ) মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা মেনে নেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি।

 

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই অনুরোধ লঙ্কান জনগণ কতটা মানবে তা বলা কঠিন। গত এপ্রিল মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ২৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে, গত বছরের তুলনায় খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

অর্থনীতির এমন নাজুক এমন পরিস্থিতির জন্য লঙ্কান সরকারের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। বৃহস্পতিবারও রাজধানী কলম্বোয় বিক্ষোভে নামা কয়েকশ শিক্ষার্থীর ওপর টিয়ারগ্যাস, জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পর তার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসেরও পদত্যাগ দাবি করছেন।

চাপের মুখে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দা। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে তিনি রাজাপাকসে ভাইদের ‘হাতের পুতুল’ বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার কলম্বোর পেট্টাহ বাজারে ফল ও সবজি বিক্রি করছিলেন ৬০ বছর বয়সী এ পিডি সুমনাভাথি। তিনি বলেন, জীবন কতটা কঠিন তা নিয়ে কথা বলার কোনো মানে নেই। দুই মাস পর কী হবে তা বলতে পারি না। এখন যে অবস্থা, সেভাবে চললে আমরা এখানেও নাও থাকতে পারি।

 

এর পাশেই রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা একটি দোকানে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সংকটকালে দেশটিতে গ্যাসের সরবরাহ যেমন কম, তেমনি বেড়েছে দামও।

গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মোহাম্মদ শাজলি নামে এক গাড়িচালক বলেন, মাত্র ২০০ সিলিন্ডার বিতরণ করা হয়েছে, অথচ লোক রয়েছে প্রায় ৫০০।

শাজলি জানান, তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। পরিবারের জন্য খাবার রান্না করতে তৃতীয় দিনের মতো লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ গাড়িচালক বলেন, গ্যাস ছাড়া, কেরোসিন ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না। এর বিকল্প কী? খাবার ছাড়া আমরা মারা যাবো। শতভাগ নিশ্চিত, এটাই ঘটবে।

লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ এবং রেমিটেন্স থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস আমদানি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সরবরাহ এখনো শুরু হওয়া বাকি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর