পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাম তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। আগামী সোমবার (২৩ মে) থেকে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। খবর রয়টার্সের।

ইন্দোনেশীয় সরকারের লক্ষ্য ছিল, স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ হাজার রুপিয়ায় (প্রায় ৮৩ টাকা) নামানো। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আগেই দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে তীব্র চাপের মুখে শেষপর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাধ্য হলো উইদোদো প্রশাসন।

ইন্দোনেশিয়ায় পাম তেল রপ্তানি বন্ধের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার (১৭ মে) রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ করেছেন শত শত কৃষক। সরকারের ওই সিদ্ধান্তে রোজগার অর্ধেকে নেমে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। নিষেধাজ্ঞা দ্রুততম সময়ে প্রত্যাহার না হলে এর চেয়েও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দেশটির পাম চাষিরা।

 

এছাড়া পাম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এরই মধ্যে তার জনসমর্থন গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।

ইন্ডিকেটর পলিটিক ইন্দোনেশিয়া নামে স্থানীয় একটি সংস্থার পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, চলতি মে মাসে জোকো উইদোদোর জনসমর্থন ৫৮ দশমিক ১ শতাংশে নেমে গেছে, যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে সর্বনিম্ন। সেসময় ৫৩ শতাংশে নেমেছিল তার জনসমর্থন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যেই জনপ্রিয়তায় ১২ পয়েন্ট হারিয়েছেন ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট।

স্থানীয় বাজারে দাম কমানোর কথা জানিয়ে গত ২২ এপ্রিল পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উইদোদো, ২৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয় এ সিদ্ধান্ত। ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, দেশীয় বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসলেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তবে দেশটিতে এখনো তেলের দাম চড়া।

ইন্দোনেশীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ছিল গড়ে ১৭ হাজার ৩০০ রুপিয়া (১০৩ টাকা প্রায়)। ইন্দোনেশিয়ার মুখ্য অর্থমন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হার্তার্তো জানিয়েছিলেন, প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম গড়ে ১৪ হাজার রুপিয়ায় (প্রায় ৮৩ টাকা) নামলেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, দেশটির ১ কোটি ৭০ লাখ পাম চাষির জীবিকার কথা বিবেচনায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

বড় ক্ষতি ইন্দোনেশিয়ার
বৈশ্বিক ভোজ্যতেলের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছে ইন্দোনেশিয়া। বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোজ্যতেল সরবরাহ করে দেশটি। তবে তাদের ‘অননুমেয়’ রপ্তানি নীতির কারণে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয় আমদানিকারকদের। এর সবশেষ উদাহরণ, হুট করে পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া। ইন্দোনেশীয় সরকারের এমন একক সিদ্ধান্তের প্রভাবে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের দাম, চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোকে।

তবে পাম অয়েল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ইন্দোনেশিয়াও খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না। একদিকে অচল হয়ে পড়েছে রপ্তানি আয়ের বিশাল একটি অংশ, প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা হারাতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, বন্ধুত্ব তো বটেই, বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের বাজারও হারাচ্ছিল দেশটি। ইন্দোনেশিয়ার অনুপস্থিতির সুযোগে বৈশ্বিক ভোজ্যতেলের বাজারে তাদের অংশ ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী মালয়েশিয়া।

বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া। গত ২৮ এপ্রিল তারা পাম রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে ভোজ্যতেল আমদানিকারক দেশগুলো মালয়েশিয়ার দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে শুরু করে। ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদনের অর্ধেক হলেও বিশ্বের মধ্যে পাম অয়েল উৎপাদনে মালয়েশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়।

শুধু ইন্দোনেশিয়ার অনুপস্থিতির সুযোগই নয়, রপ্তানি শুল্ক কমানোর মাধ্যমেও বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করার পরিকল্পনা নেয় মালয়েশিয়া। গত সপ্তাহে মালয়েশীয় ভোগ্যপণ্য মন্ত্রী জুরাইদা কামরুদ্দিন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পাম অয়েলে রপ্তানি শুল্ক প্রায় অর্ধেক কমানোর জন্য দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি পর্যালোচনায় একটি কমিটিও করা হয়েছে।

তাছাড়া পাম অয়েল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে চাপে পড়ে ইন্দোনেশীয় সরকারও। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে চলছিল ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

ইন্দোনেশিয়ান পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশটি ৩ কোটি ৪০ লাখ টন পাম অয়েল রপ্তানি করে ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছিল। কিন্তু এ বছর সেই আয়ে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে দেশটির সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর