খরার ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, আশাবাদী বাংলাদেশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের জন্য অন্যতম প্রধান আমদানি বাজার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকার দেশ দুটি থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে তেল, গম, চিনি, মাংসসহ নানা ধরনের ফল ও মসলা আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ওই অঞ্চলে গত কয়েক মাস তীব্র খরার কারণে এ বছর কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যার ফলে অনিশ্চয়তায় পড়ে সয়াবিনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের আমদানি। সেই সঙ্গে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। তাতে আশার আলো দেখছেন বাংলাদেশের ভোক্তারা।

ব্রাজিলে এ বছর খরা সত্ত্বেও রেকর্ড পরিমাণ ফসল ফলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অব জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (আইবিজিই)। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সরকারি সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে দেশটিতে ফসল উৎপাদন ২৬ কোটি ১৫ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় অন্তত ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

এর আগে গত মার্চ মাসে ব্রাজিলে ফসল উৎপাদনের যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, নতুন পূর্বাভাসে তার চেয়ে এক শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৫ লাখ টন বেশি ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।

 

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আইবিজিই’র গবেষণা ব্যবস্থাপক কার্লোস বারাদাস বলেন, দেশের মধ্য ও দক্ষিণ অংশের গ্রীষ্মকালীন ফসল আবহাওয়াজনিত সমস্যায় পড়েছিল, যার ফলে কম উৎপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারিতে বৃষ্টিপাত ফেরার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ফসল পুনরুদ্ধার হয়েছে।

এবারের মৌসুমে ব্রাজিলের প্রধান কৃষিপণ্য সয়াবিন ঘরে তোলা প্রায় শেষের পথে। সেখানে গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সয়াবিনের উৎপাদন বেড়েছে অন্তত দুই শতাংশ। তা সত্ত্বেও এ বছর ব্রাজিলে বহুল ব্যবহৃত এ তেলবীজের মোট উৎপাদন ১১ কোটি ৮৫ লাখ টন দাঁড়াতে পারে, যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কম।

এ বিষয়ে বারাদাস বলেন, আগেও বলেছি, ফসলে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফসল ফলানোর সময়ই ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছিল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। সেখানে গত বছরের তুলনায় সয়াবিন উৎপাদন মোটামুটি ৪৬ শতাংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

শুধু সয়াবিনই নয়, ব্রাজিলে মার্চ মাসের তুলনায় এপিলে উৎপাদন বেড়েছে আলু (২ দশমিক ৪ শতাংশ), টমেটো (১ দশমিক ৫ শতাংশ), মটরশুটি (১ দশমিক ৩ শতাংশ), আঙুর (১ দশমিক ২ শতাংশ), ক্যানেফোরা কফি (এক শতাংশ) প্রভৃতিরও।

আইবিজিই’র গবেষণা ব্যবস্থাপক নিশ্চিত করেছেন, এবারের মৌসুমে দেশটিতে ভুট্টারও চমৎকার ফলন হয়েছে, যা গ্রীষ্মকালীন ক্ষতি অনেকটাই পূরণ করে দেবে।

ব্রাজিলের মতো খরা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে প্রতিবেশী আর্জেন্টিনাও। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে গত কয়েক মাস বিরূপ আবহাওয়া সত্ত্বেও সয়াবিন, সূর্যমুখী, ভুট্টার মতো তেল-জাতীয় ফসলের ফলন অনেকটাই ‘সন্তোষজনক’।

 

প্রক্রিয়াজাত সয়াবিন রপ্তানিতে বিশ্বে এক নম্বর এবং ভুট্টা রপ্তানিতে দ্বিতীয় আর্জেন্টিনা। ১৯৯০-এর দশকে উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের পর থেকে দেশটির অন্যতম প্রধান কৃষিপণ্য হয়ে উঠেছে তেলবীজ। গত চার দশকে তাদের জাতীয় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৪ গুণ।

সম্প্রতি বুয়েন্স আয়ার্স টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর আর্জেন্টিনায় প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ হেক্টরে লাগানো হয়েছে সয়াবিন। বাজে আবহাওয়ার কারণে এ বছর দেশটির কৃষি উৎপাদন ১২ কোটি ৭০ লাখ টন দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই শতাংশ কম।

আর্জেন্টিনার চাষিরা এরই মধ্যে গম ও সূর্যমুখীর চাষ করেছেন, দুটোরই ফলন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। তারা এখন চাষ করছেন সয়াবিন ও ভুট্টা। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে গম বপনের নতুন মৌসুম শুরু হবে দেশটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, আর্জেন্টিনার কৃষিপণ্য রপ্তানি এ বছর রেকর্ড ৪ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বেশি।

 

লাতিন আমেরিকার দেশ দুটিতে খরা সমস্যা মিটে যাওয়ায় আশার আলো দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। কারণ, দেশে সয়াবিন তেল আমদানি করা মূলত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। সম্প্রতি দেশ দুটিতে খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ার খবরে বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। আগে প্রতি টন ৭৫০ ডলারে কেনা গেলেও এপ্রিলে তা ১ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় খরা আর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে দেশে এরই মধ্যে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। সবশেষ ৪০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম করা হয়েছে ১৯৮ টাকা। তবে খরা সমস্যা কাটিয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় তেলবীজের বাম্পার ফলন ক্রেতাদের আশাবাদী করে তুলেছে। দেশ দুটি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সয়াবিন আমদানি হলে বাংলাদেশের বাজারে এর দাম আবারও কমে আসবে বলে আশা করছে সাধারণ মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর