মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই মাসের বেশি সময় ধরে মারিউপোলের একটি ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ থাকা দুই শতাধিক সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে রুশ সেনাদের কাছে। তাদেরকে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইউক্রেনও এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে জীববিজ্ঞান পরীক্ষাগারে মূলত জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইলে ভেটো দেবে তুরস্ক।

গতকাল ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়ার বলেছেন, রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করা সেনাদের মধ্যে মারাত্মকভাবে আহত ৫৩ জনকে নোভোয়াজোভস্ক শহরে নেয়া হয়েছে। এ শহরটা রাশিয়াপন্থী সৈন্যদের নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেছেন, আরো ২১১ জনকে মানবিক করিডোর ব্যবহার করে ওলেনিভকা শহরে পাঠানো হয়েছে, যেটাও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এর আগে রাশিয়া বলেছিল, আহত এসব সৈন্যকে উদ্ধারের জন্য তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় এ বন্দর শহরটির একটি অবরুদ্ধ শিল্প কারখানা এলাকা থেকে সোমবার রাতে বেশ কয়েকটি বাসে করে সৈন্যদের বের করে আনা হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেখানো হয়েছে, আজভস্টাল থেকে আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যদের উদ্ধার করা হচ্ছে। মালিয়ার বলেছেন, রাশিয়ার যেসব সৈন্যদের বন্দী করা হয়েছে তাদের সঙ্গে এই সৈন্যদের বিনিময় করা হতে পারে। অর্থাৎ ইউক্রেন এ আহত সৈন্যদের ফিরে পেতে পারে যখন তারা তাদের কাছে আটক রাশিয়ার সৈন্যদের ছেড়ে দেবে। এদিকে গতকাল স্থানীয় সময় ভোররাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কি তার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ইউক্রেনের সৈন্য, গোয়েন্দা বাহিনী, মধ্যস্থতাকারী এবং তাদের সঙ্গে রেডক্রস ও জাতিসংঘ এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের এসব নায়কদের জীবিত থাকা প্রয়োজন।’ অবশ্য তিনি সতর্ক করে দেন যে, এসব সৈন্য এখনই হয়তো মুক্তি পাচ্ছে না, তাদের মুক্ত করার আলোচনার জন্য ‘সময়’ লাগবে।

রুশ সৈন্যরা মারিউপোলের দিকে অগ্রসর হওয়ার পর ইউক্রেনের শত শত সৈন্য গত মার্চ থেকে এই স্থানটিতে অবরুদ্ধ হয়ে আছে – যাদের মধ্যে রয়েছে আজভ রেজিমেন্ট, ন্যাশনাল গার্ড, পুলিশ, আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ইউনিটের সদস্য এবং বহু বেসামরিক বাসিন্দা। এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে কতজন মানুষ ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে রয়ে গেছে। আত্মসমর্পণটি মারিউপোলের যুদ্ধের সমাপ্তি চিহ্নিত করে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেন বিশ্বাস করে কয়েক মাস রাশিয়ান বোমাবর্ষণ এবং অবরোধের অধীনে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। শহরটি এখন ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে। এর সম্পূর্ণ দখল হল যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজয়।

এর মাধ্যমে মস্কো আজভ সাগরের উপকূলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে গ্রিসের আয়তনের সমান একটি অবিচ্ছিন্ন এলাকা অধিগ্রহণ করেছে। এটি রাশিয়ার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করবে। এখন রুশ সেনারা সহজেই পূর্ব ইউক্রেনের শিল্প কেন্দ্রস্থলে বা অন্য কোথাও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে পারবে। পাশাপাশি রাশিয়া বলেছে যে, তাদের বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলে মার্কিন ও ইউরোপীয় অস্ত্রের চালান ধ্বংস করেছে। এছাড়া, যুদ্ধের অবসান নিয়ে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে আলোচনা থেমে গেছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইউক্রেনে আসলে জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র : রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোমবার বলেছেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞান পরীক্ষাগারে মূলত জীবাণু অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইট অনুসারে, পুতিন যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার (সিএসটিও) সদস্যদেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। পুতিন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন নথি ইতোমধ্যেই এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে জীবাণু অস্ত্রের উপাদান পাওয়া গেছে। এ উপাদান ‘জীবাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ কনভেশন’ অনুসারে অবৈধ।

সম্মেলনে পুতিন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট টোকায়েভ, কিরগিজস্তানে প্রেসিডেন্ট জাপারভ এবং তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট রাহমন অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে একটি যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে ন্যাটোর বিস্তার রাশিয়ার জন্য সরাসরি হুমকি নয়। তবে এই অঞ্চলে সামরিক স্থাপনার বিস্তার ঘটালে তা অবশ্যই আমাদের প্রতিক্রিয়া উস্কে দিবে।

ফিনল্যান্ড, সুইডেন ন্যাটোতে যোগদানে ভেটো দেবে তুরস্ক : চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সাময়িক জোট ন্যাটোতে যোগদানের খবর নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। দেশ দুটি ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করবেন। তিনি আরো বলেছেন, ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ককে এ বিষয়ে রাজি করানোর জন্য ওই দুই দেশে আঙ্কারায় যেন কোনো প্রতিনিধি না পাঠায়।

প্রথমে ফিনল্যান্ড তারপর সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এরদোগান এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সূতিকাগার’ মনে করে তুরস্ক। তুরস্কে ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য এরদোগান-বিরোধী প্রবাসী নেতা ফাতহুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করে আঙ্কারা। তুর্কি সরকার অভিযোগ করে আসছে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন গুলেনের সমর্থকদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। একইসাথে ওই দুই দেশে তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পিকেকে’র সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ করে আঙ্কারা। পিকেকে’কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে তুরস্ক।

সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যেসব দেশ তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ন্যাটোতে তাদের সদস্যপদ আটকে দিতে আঙ্কারা বদ্ধপরিকর। ২০১৯ সালে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের কারণে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড আঙ্কারার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাটোতে ১৯৫২ সালে যোগ দেয় তুরস্ক। মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোটে নতুন সদস্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এই জোটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে তুরস্ক।

সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এপি, আল-জাজিরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর