হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্যক্তি এবং পরিবার পর্যায়ে কেউ আর ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা রাখতে পারবেন না। ক্রয়সূত্রে কারও মালিকানায় এর চেয়ে বেশি জমি থাকলে তা সরকারের কাছে সমর্পণ করতে হবে। তবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হলে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষিজমি সংশ্লিষ্ট মৌজামূল্যে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকারের অনুকূলে খাস করে নেওয়া হবে।
এখানে পরিবার বলতে পরিবারে যার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা থাকেন, তাদের সবাইকে নিয়ে পরিবার বা এক ইউনিট বোঝাবে। অর্থাৎ পিতা পরিবারের প্রধান হলে তার ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও ভাই-বোন থাকলেও তাদের সবাইকে নিয়ে একটি একক ইউনিট গণ্য করা হবে। তাদের প্রত্যেকের নামে থাকা কৃষিজমির যোগফল যদি ৬০ বিঘার বেশি হয়, তাহলে এই আইনের বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে। তবে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের জন্য শর্তসাপেক্ষে এই ধারা শিথিল করার বিধান রাখা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিগগিরই এ বিষয়ে সরকার আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা এ সংক্রান্ত ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২২’ নীতিগত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হবে। পরবর্তী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইনটি কার্যকর হওয়ার দিন থেকে কৃষিজমির মালিকানার বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে সরকার। এর আগে এ সংক্রান্ত বিধিমালায় খুঁটিনাটি সব বিষয় আরও বিশদভাবে স্পষ্টীকরণ করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনের প্রধান লক্ষ্য কৃষিজমির সুরক্ষা করে ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবে এ আইনে আবাসন ব্যবসায়ীদের জমিকে সংযুক্ত করা হয়নি। মূলত ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ-১৯৮৪ হালনাগাদ করে নতুন আইনটি বিশদভাবে যুগোপযোগী করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অন্য আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, এ আইনটি প্রাধান্য পাবে।
আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে কৃষিজমি অর্জন সীমিতকরণ বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনের ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, যিনি বা যার পরিবার ৬০ প্রমিত বিঘা (৩৩ শতকে এক বিঘাকে প্রমিত বিঘা বোঝায়) অপেক্ষা অধিক কৃষিজমির মালিক, তিনি নতুন করে হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য যে কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষিজমি অর্জন করতে পারবেন না। তবে কোনো সংস্থা জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে এর ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করতে পারবে।
ধারা ২-এ এই বিধিনিষেধ আবার ৭টি ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। এর মধ্যে-ক. যদি কোনো সমবায় সমিতির সব সদস্য তাদের জমির মালিকানা সমিতির অনুকূলে হস্তান্তর করে নিজেরা চাষাবাদ করেন। খ. চা, কফি, রাবার বা অন্য ফলের বাগানের জন্য ব্যবহৃত জমি। গ. কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য জমি ব্যবহার করলে। ঘ. অন্য কোনো কাজের জন্য জনস্বার্থে সরকার প্রয়োজন মনে করলে। ঙ. কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০০% রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য অথবা কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য অথবা ১০০% রপ্তানিমুখী বিশেষায়িত শিল্পের জন্য সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে ৬০ প্রমিত বিঘার ঊর্ধ্বে নির্ধারিত পরিমাণ জমির মালিকানা অর্জন করা যাবে। চ. শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারপ্রধানের অনুমোদন সাপেক্ষে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি অর্জন করতে পারবে। ছ. ওয়াকফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাস্টের ক্ষেত্রে এর মালিকানাধীন জমির সম্পূর্ণ আয় ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হলে এইরূপ জমির ক্ষেত্রে এই ঊর্ধ্বসীমার বিধান প্রযোজ্য হবে না। ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যদি জমির আয় আংশিক ধর্মীয়/দাতব্য কাজে এবং আংশিক কোনো ব্যক্তির স্বার্থে ব্যয় হয়ে থাকে, তবে জমির যে অংশের আয় কেবল ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হয়, সেই পরিমাণ জমির জন্য এই ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য হবে না।
আইনের ৪(৩) ধারায় বলা আছে, যিনি বা যার পরিবার ৬০ বিঘা অপেক্ষা কম কৃষিজমির মালিক, তিনি যে কোনো উপায়ে নতুন কৃষিজমি অর্জন করতে পারবেন। কিন্তু উক্তরূপ নতুন জমি তার মালিকানায় থাকা কৃষিজমিসহ একত্রে ৬০ বিঘার অধিক হবে না।
এছাড়া ৪(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ক্রয়সূত্রে যদি কোনো জমির মালিক এই ধারার বিধানাবলি লঙ্ঘন করে কোনো নতুন কৃষিজমি অর্জন করেন, তাহলে যে পরিমাণ জমি ৬০ প্রমিত বিঘার বেশি হবে, তা সরকারের অনুকূলে সমর্পিত হবে। এই সমর্পিত জমির জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পাওয়া কিংবা আদায় করা যাবে না। তবে সেটি যদি উত্তরাধিকার, দান বা উইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়, তাহলে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।
৪(৫) ধারায় বলা আছে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ৬০ প্রমিত বিঘার বেশি হলে জমির মালিক তার পছন্দমতো ৬০ বিঘা জমি নিজের অনুকূলে রাখতে পারবেন। অবশিষ্ট জমি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত মৌজামূল্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার খাস করতে পারবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি সরকারের পক্ষে এই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।