হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝালকাঠির রাজাপুরের পোনা নদীর চরাঞ্চলে আমন ধান, সরিষা ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের পর এবার গমের ব্যাপক ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। এবছর আশাতীত ফলন হওয়ায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষক আল-আমিন।
চলতি মৌসুমে পোনা নদীর চরে ব্যাপক পরিসরে হয়েছে গমের চাষ। এ বছর ভালো ফলন ও বাজার দামে খুশি কৃষকরা। এখন চলছে গম কাটা ও মাড়াই পুরোদমে শুরু হবে।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আর বাজারে গমের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছসহ গমের শীষ পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। সোনালী আভায় ঢেকে আছে মাঠ। চারদিক গমের সেই সোনালী রঙে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখন মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে গম কাটা। গম কাটা, শীষ থেকে গম ছাড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রতিটি কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গম চাষে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। চরের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু ফসল আর ফসল। বিভিন্ন ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে চরাঞ্চলের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। আর গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয় চৈত্র মাসের শেষ দিকে। গমের বীজ বপনের পর খুব বেশি সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মতো জৈব সার ও চারা বড় হওয়ার কিছুদিন পরেই মাটির উপরের অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে কম খরচে গম চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকদের দাবি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং মূলধন পেলে এ অঞ্চলে গম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে।
কৃষকরা জানান, বোরো ধানের তুলনায় গম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই এবছর গম চাষে ঝুঁকেছেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে যথাসময়ে বারি ৩৩ জাতের ২০ কেজি বীজ, ডিএপি সার ১০ কেজি, পটাশ সার ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগসহ পরিচর্যার কারণে ফলন অনেক ভালো হয়েছে এবং এরই মধ্যে অনেক স্থানে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকলে তারা লাভবান হবেন।
কৃষক আল-আমিন জানান, গত ১০০ বছর ধরে এখানে চর জেগে ওঠায় এবার প্রথম ২০ শতাংশ জমিতে গমের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় আগামী বছরে ৩বিঘা জমিতে গম চাষ করতে চান। বর্ষা মৌসুমে চরের জমি পানিতে ডুবে থাকে। তখন আমন ধান চাষ করতে হয়। ধান কাটার পরে চর থেকে পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার কৃষকরা গমসহ অন্যান্য ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো পেলে লাভবান হওয়া যাবে।
কৃষক জুয়েল বলেন, পোনা নদীর চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। চরাঞ্চলের জমিতে ধান, টমেটো, গম, ডাল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন ও তিলসহ বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়ে রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে অনেক কৃষক-কৃষাণীর ঘরে শান্তি এসেছে।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, রাজাপুর উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। রাজাপুরে এবছর ৩৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। গমের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি। উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল গম বীজ দিয়ে তারা ফসল ফলিয়েছে। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামী বছর গমের আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। পলি পড়া চরের জমি গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্ষা মৌসুমে চরগুলো পানিতে ডুবে থাকে। পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েন। ডুবে যাওয়া চরের জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমাণ কম লাগে। এজন্য পোনা নদীর চরে গম চাষে বেশি খরচ হয় না। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। হহ