চিত্রনায়ক সোহেল হত্যা: আসামি আশিষ চৌধুরী কারাগারে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ঢাকাই সিনেমার নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজা নুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন বিচারক।

এর আগে আশিষ চৌধুরীকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মাদকদ্রব্য আইনে করা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই শামীম হোসেন।

অপরদিকে আশিষ চৌধুরীর আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ওই আদেশ দেন।

এর আগে ৫ এপ্রিল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে গুলশানের একটি বাসা থেকে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে দুই নারীকেও আটক করা হয়। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মদ। পরে আশিষ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।

পরদিন দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল চৌধুরী হত্যার তিনটি কারণসহ নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন আশীষ চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে বোতল চৌধুরী জানিয়েছেন, বনানীর আবেদীন টাওয়ারে ১৯৯৬ সালে বোতল চৌধুরী ও তার বাল্যবন্ধু আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলত।একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। ক্লাবে বসেই আজিজ মোহাম্মদ ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের সঙ্গে মিটিং করতেন। তাছাড়া বান্টি ইসলাম ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজির জামাতা। এ সুবাদে বান্টি ও বোতলের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গভীর সখ্য ছিল।

র‌্যাবের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে বোতল চৌধুরী বলেছেন, বনানী জামে মসজিদের পাশেই আবেদীন টাওয়ারের ৭ম তলায় ক্লাবটি। সেখানে রাতভর উচ্চৈঃস্বরে গানসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে বারবার চেষ্টা চালান।মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে সোহেল চৌধুরীর প্রতিবাদের কারণে ক্লাব মালিক বান্টি ও বোতলের ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত আসে। এছাড়া ওই ক্লাবে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগদ্বন্দ্ব ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

আজিজ মোহাম্মদ ভাই ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলকে উচিত শিক্ষা দিতে বান্টি ও বোতলের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদেরও খ্যাপানো হয় সোহেল চৌধুরীর ওপর। ওই ক্রাবে নিয়মিত যাতায়াত ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের।

বান্টি, আশীষ ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাব দেন শীর্ষসন্ত্রাসী ইমনকে। ইমন এ প্রস্তাবে রাজি হন। পরে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন আহত হন।

স্থানীয় জনতা আদনান সিদ্দিকী নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি। ২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করেন। আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন।

২৭ মার্চ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। ২৮ মার্চ গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি স্ব-উদ্যোগে সংগ্রহ করে র‌্যাব পলাতক অন্যতম আসামি আশীষ চৌধুরীকে আটকে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরপর মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, বোতল চৌধুরীকে গুলশানের ২৫/বি ফিরোজা গার্ডেন নামের যে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই বাসাটি একটি ফাইভ স্টার হোটেলের এমডি কিছুদিন আগে ভাড়া করে দিয়েছিলেন। তিনি জানান, ওই বাসা থেকে যে দুজন নারীকে আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বোতল চৌধুরীর নানা অনৈতিক কাজের রেকর্ড র‌্যাবের হাতে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর