হাওর বার্তা ডেস্কঃ নোয়াখালীর শস্য ভাণ্ডার খ্যাত সুবর্ণচর উপজেলায় কৃষিতে একের পর এক সম্ভাবনা ও সাফল্যের গল্প রচিত হচ্ছে। চাকরির পেছনে না ছুটে শিক্ষিত যুবক মো. জয়নাল আবেদিন সবুজ শীত মৌসুমে উচ্চমূল্যের সবজি করলার চাষ করে পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা।
সবুজের এই সাফল্য ও সমৃদ্ধি দেখে এখন আশপাশের অনেক কৃষক করলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
উপকূলীয় সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের চর হাসান গ্রামে শীতকালীন করলা চাষে আর্থিকভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন শিক্ষিত যুবক মো. জয়নাল আবেদিন সবুজ। সবুজ একসময় স্নাতক পাশ করার পর চাকরির পেছনে ছুটেছেন। বেকারত্বের দুঃসময়ে অনুভব করেছেন বাস্তবতা।
পরে সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব মেধাশক্তি ও পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হবেন। নিজের অধীনে আরও ১০-১৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। কিন্তু পূঁজির অভাবে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে পারছেন না। অন্যদিকে যৌথ সংসারের আর্থিক অনটন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
একপর্যায়ে সবুজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার করলা চাষ দেখে আগ্রহী হন। শুরুতে পরিবারের অসম্মতি থাকলেও তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরে করলা চাষে এক লাখ টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করে ৭ লাখ টাকার করলা বিক্রি করেন সবুজ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। পরিবারের পুরো সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে করলার চাষ শুরু করেন।
সবুজ ১০ বছর আগে ৪০ শতাংশ জমিতে এক লাখ টাকা খরচ করে করলার চাষ করে ৭ লাখ টাকার করলা বিক্রি করেন। ক্রমান্বয়ে চাষাবাদ বাড়াতে বাড়াতে চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে আড়াই একর জমিতে করলার চাষে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। আশা করছেন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকার করলা বিক্রি হবে। গত ১০ বছর করলার চাষ করে আর্থিক লাভের পাশাপাশি পরিবারকে করেছেন সমৃদ্ধশালী। করলা চাষে সবুজের এই সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষক করলা চাষ করে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
কৃষক জয়নাল আবেদিন সবুজ জানান, শীত মৌসুমে করলা চাষ খুবই লাভজনক। স্বাভাবিক মৌসুমের থেকে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। শীতের মৌসুমে করলার চাষ করলে বাজারদরও ভালো পাওয়া যায়। এজন্য করলার চাষ করে আমি লাভবান।
যারা বেকার যুবক তাদের জন্য আমি একটা কথাই বলবো, যেমন আমি পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না পেয়ে একসময় হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু পরে ইউটিউব দেখে করলার চাষ করে আজ আমি স্বাবলম্বী। আরও অনেক শিক্ষিত যুবক ইউটিউব দেখে চাষাবাদ করে তারাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সুবর্ণচর উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে শীত মৌসুমের ৩শ হেক্টর জায়গাতে করলার আবাদ হয়। বাংলাদেশে উচ্চমূল্য ফসলগুলোর মধ্যে করলা একটি। যদিও করলাকে বলা হয় খরিপ মৌসুমে ফসল, কিন্তু কৃষক বেশি লাভবান হয় রবি মৌসুমে আবাদ করলে।
আমরা সুবর্ণচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের পাশাপশি করলার আবাদ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি তরুণ উদ্যোক্তা, শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা যদি উচ্চমূল্য ফসল আবাদে এগিয়ে আসে তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এবং একপর্যায়ে তারা প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী হয়।
তিনি আরও জানান, কৃষক সবুজ তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। যিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রযুক্তি যথাযথভাবে গ্রহণ করেছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। এই অর্থ বছরে আমরা আশা করছি যে, তিনি ৪০ লাখ টাকার করলা বিক্রি করবেন। তার দেখাদেখি সুবর্ণচর উপজেলার চর হাসান এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও করলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আশাবাদী, শীতকালীন করলা চাষ সম্প্রসারিত হয়ে এই উপজেলাতে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পরবে এবং কৃষক সবুজের মতো আরও শিক্ষিত তরুণ যুবকরা এই ফসল আবাদে এগিয়ে আসবেন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪