তাহেরি বললেন: আমি জানিই না কে বা কারা টাকা নিয়েছে, মামলার আবেদন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় অগ্রিম ৩৫ হাজার টাকা নিয়েও ওয়াজ মাহফিলে না আসার অভিযোগ উঠেছে আলোচিত ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরির বিরুদ্ধে। বালাগঞ্জে সেই মাহফিলে আয়োজকরা মাইকে বিষয়টি জানালে তোলপাড় শুরু হয়। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচিত হচ্ছে বিষয়টি। এ অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে সিলেটের আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তাহেরি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে সিলেটের বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে তিনি ১৫ জনকে আসামি করে এ মামলার আবেদন করেন।

বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি আজ সিলেটের বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত আগামী ৩১ মার্চ আদেশের দিন ধার্য করেছেন।

আদালত প্রাঙ্গণে গিয়াস উদ্দিন তাহেরি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বালাগঞ্জের মাহফিলের কোনো দাওয়াত পাইনি। জানিই না কে বা কারা আমার নাম করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তাই আমি আদালতে মামলা দায়ের করতে এসেছি। ’

বিভিন্ন ফেসবুক লাইভে তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে এবং তার নামে টাকা নেওয়ার অপবাদ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাই বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করতে আসতে হয়েছে আমাকে। আদালত আমার আবেদনটি আমলে নিয়েছেন। ’

সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ৩১ মার্চ এ মামলার আদেশের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। ’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আলোচিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকা নিয়ে সিলেটের বালাগঞ্জের একটি ওয়াজ মাহফিলে না আসার অভিযোগ ওঠে। এ দিন বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে এ মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয়রা।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়াজ মাহফিলটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরিকে। এদিন বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর ওয়াজ করার কথা ছিল। মাহফিলে আসা বাবদ তার পিএস-এর কাছে দুই ধাপে অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাহেরির পিএসের মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। ওয়াজের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কেউ কল রিসিভ করেননি। এমনকি কল ব্যাকও করেননি। পরে আয়োজকরা বিষয়টি মাহফিলের মাইকে জানিয়ে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ওয়াজ শুনতে আসা মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চান। এসময় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাহেরির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। পাশাপাশি জুতা হাতে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে তাহেরিকে পুরো সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এমন কয়েকটি ভিডি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীসময়ে বিষয়টি তাহেরির নজরে আসলে তিনি অভিযোগের বিষয়টি সস্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন। ওইদিনই তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্টও দেন। পোস্টে তাহেরি লিখেন, ‘আজকে দিনের বেলা একটি ফেসবুক লাইভ ও ইসলামী সুন্নী মহাসম্মেলনের একটি পোস্টার আমার নজরে এসেছে, উক্ত লাইভে আমাকে নানাভাবে দোষারোপ করে কথা বার্তা বলা হয়েছে। পোস্ট গুলোতে মানহানীকর কথা বলা হয়েছে। যা কখনও কাম্য নয়। আমি দৃঢ় চিত্তে বলতে চাই, আমাকে দাওয়াত না দিয়ে মাহফিল কমিটি প্রতারণামূলকভাবে আমার নাম পোস্টারে ব্যবহার করেছে। প্রতারণামূলকভাবে পোস্টারে আমার নাম ব্যবহার করে লক্ষ মানুষের কাছে আমাকে অপমান করেছে। আবার ফেসবুক আইডিতে লাইভ করে মানহানিকর কথা বলছে। ’

তিনি আরো লিখেন, ‘আমি কখনো দাওয়াত রাখলে মিস করি না, ঐ মাহফিলের কমিটির লোকজনকে চ্যালেঞ্জ করছি তারা কোন প্রমাণ দিতে পারবে না আমি কখনও দাওয়াত নিয়েছি। যদি কোনো প্রতারক আমার নাম ব্যবহার করে কোনো প্রতারণা করে সেটার জন্য আমি দায়ী নয়, সংশ্লিষ্টরা দায়ী। আমার সাথে কখনও মাহফিল কমিটি যোগাযোগ করে নাই। আজকে বিকাল সাড়ে ৫ টায় সাংবাদিক আজাদ ভাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হলে এই প্রতারণার খবর জানতে পারি যে কে বা কারা আমার নামে প্রোগ্রাম দিয়ে ৩৩ হাজার টাকা নিয়েছে। তাই উক্ত মাহফিল কমিটি প্রতারণাকারী ও ফেসবুক লাইভের বিরুদ্ধে আগামীকাল সাইবার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সব মুনাফেক শয়তানের মুখোশ উন্মোচন হবে। ইনশাআল্লাহ। ’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর