মহামারির মধ্যেও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সৌদির অর্থনীতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারির আঘাত সামলে ২০২১ সালে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব। দেশজুড়ে গণহারে টিকাদান, সময়োপযোগী সরকারি উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা বৃদ্ধির জেরে নতুন উদ্যোমে এগিয়েছে আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। এক বছর আগেও যাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চার শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল, ২০২১ সালে তাদেরই ত্রৈমাসিক বাজেটে অর্থ উদ্বৃত্ত দেখা গেছে, কমেছে বেকারত্বের হার। কিছু কিছু সূচকের অবস্থা তো মহামারিপূর্ব সময়ের চেয়েও ভালো।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সৌদি আরব কীভাবে সামলালো অর্থনৈতিক ধাক্কা-

২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে সৌদি আরবের তেল রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। একপর্যায়ে তা ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। অবশ্য ২০২১ সালে তাদের পুরো বছরের তেল রপ্তানি ২০১৯ সালের তুলনায় কমই ছিল।

দ্বিতীয় প্রান্তিক: কমলো বেকারত্ব
২০২১’র দ্বিতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সৌদির তেল রপ্তানি বেড়েছে ১২৩ শতাংশ এবং তেল-বহির্ভূত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির হার ছিল ৬১ শতাংশ। উভয় ক্যাটাগরিতে অন্তত ২০১৮ সাল থেকে এটিই সৌদি আরবের সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি।

সৌদি পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের (জিএএসটিএটি) তথ্যমতে, গত জুনে দেশটির মোট রপ্তানির ৭২ শতাংশই ছিল তেল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ শতাংশ বেশি।

 এই তিন মাসে সৌদি নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের একই সময়ের পর থেকে সর্বনিম্ন। এক বছর আগেও দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

তৃতীয় প্রান্তিক: বাজেট উদ্বৃত্ত এবং মূল্যস্ফীতির পতন
বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সারা বিশ্বে তেলের চাহিদার সঙ্গে বাড়তে থাকে দামও। ওই সময় সৌদির তেল রপ্তানি বেড়ে ২০ হাজার ৬৬০ কোটি রিয়ালে পৌঁছায়, যা ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকের পর থেকে সর্বোচ্চ।

এর ফলে তিন মাসে তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সাত শতাংশ বেড়ে যায়, যা ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ রেকর্ড। এসময় তেল ও তেল-বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি বাড়ে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

তৃতীয় প্রান্তিকেই সৌদি অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর দেশটি প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক বাজেটে উদ্বৃত্ত রেকর্ড করেছে। এর পরিমাণ ছিল ৬৭০ কোটি রিয়াল। অথচ এর আগেও তিন মাসেও সৌদির বাজেটে ৪৬০ কোটি রিয়াল ঘাটতি দেখা গিয়েছিল।

এছাড়া, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে এসে সৌদি আরবে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় মাত্র ০.৩ শতাংশ, যা বিগত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এসময় ২০২০ সালের জুলাইয়ে বাড়ানো ভ্যাট হার কমে আসার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বাজারে।

২০২১ সালের জুনেও দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ, জুলাইয়ে তা একলাফে নেমে আসে ০.৪ শতাংশে।

আইএইচএস মার্কিটের হিসাবে, সেপ্টেম্বর মাসে সৌদির বেসরকারি খাতে যে প্রবৃদ্ধি হয়, তা ছিল ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় ভোক্তাদের কেনাকাটা বাড়তে দেখা যায়।

চতুর্থ প্রান্তিক: আরও তেল উৎপাদন
জোডির তথ্য অনুসারে, অক্টোবরে সৌদির আরবের তেল উৎপাদন ও রপ্তানি ২০২০ সালের এপ্রিলের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। আগের মাসের তুলনায় তেলের চালান পাঁচ শতাংশ বেড়ে দৈনিক ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল হয়। এসময় জ্বালানি উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ৯৭ লাখ ৮০ ব্যারেল, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও এক বছর আগের তুলনায় পুরো নয় শতাংশ বেশি।

কেমন যাবে ২০২২
সরকার ও অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২২ সালও সৌদির অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক থাকতে পারে। চলতি অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

সৌদি অর্থ মন্ত্রণালয় এ বছর নয় হাজার কোটি রিয়াল বাজেট উদ্বৃত্ত আশা করছে। কারণ, এ বছর তাদের রাজস্ব আদায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ার পাশাপাশি খরচ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি হলে ২০১৩ সালের পর প্রথমবার বার্ষিক বাজেটে উদ্বৃত্ত দেখবে দেশটি।

সূত্র: আরব নিউজ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর