ইউরোপে করোনা আক্রান্ত দশ কোটি ছাড়াল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের আঘাতে সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দেশের গত কয়েক দিনের শনাক্তের হার সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

রোববার মহাদেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্সেই শনাক্ত হয়েছে এক কোটির বেশি।

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের মোট সংক্রমণের এক-তৃতীয়াংশই এই অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।

এরপর গত দুই বছরে একের পর এক রূপ বদলে বিশ্বের সব দেশ-মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয় করোনার নতুন ভেরিয়্যান্ট ওমিক্রন। এরপর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এটি।

এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। ডব্লিউএইচওর তথ্য মতে, ইউরোপীয় অঞ্চলের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৮টিতেই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও তুরস্কও আছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আবারও বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেন নেতারা। বড়দিনের আগে-পরে বিধিনিষেধ আরোপ ও সামাজিক দূরত্ব বিধি ঘোষণা করে জার্মানি ও পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশ। জার্মানিতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নাইট ক্লাব, বার ও রেস্তোরাঁ। ১০ জনের বেশি মানুষ এক জায়গায় হওয়া নিষিদ্ধ। এর দুদিন আগে পর্তুগালে বার ও নাইট ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসা থেকে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয় যা আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সে পর্যন্ত বাইরে ১০ জনের বেশি সমবেত হতে পারবে না।

ইংল্যান্ডে কোনো নতুন বিধিনিষেধ জারি করবেন না বলে জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ সামাজিক সম্মিলনের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সেও কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার (৩ জানুয়ারি) থেকে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। যাদের পক্ষে সম্ভব তাদের বাড়িতে বসেই কাজ করতে হবে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ যেকোনো অনুষ্ঠানে দুই হাজার মানুষ একত্র হতে পারবেন। এর বেশি মানুষ কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনার পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য মতে, রোববার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ২৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শনাক্ত হয়েছে ইউরোপে। শুধু গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। এএফপি জানায়, আটলান্টিক উপকূল থেকে আজারবাইজান ও রাশিয়া পর্যন্ত ইউরোপের ৫২টি দেশে গত দুই বছরে ১০ কোটি ৭৪ হাজার ৭৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ইউরোপের ৫২টি দেশের মধ্যে ১৭টিতে গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্তের এই সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ে এক সপ্তাহে আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফ্রান্সে। রোববার পর্যন্ত সংক্রমণ এক কোটি পার হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড করেছে।

বিশ্বে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে সংক্রমণের অনুপাত সবচেয়ে ছিল ইউরোপে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ডেনমার্ক। দেশটিতে প্রতি এক লাখে দুই হাজার ৪৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপর দিকে সাইপ্রাসে এই সংখ্যা ১৯৬৯ এবং আয়ারল্যান্ডে ১৯৬৪। তবে সংক্রমণ বাড়লেও কমছে করোনাজনিত মৃত্যু। গত সপ্তাহে ইউরোপে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ৪১৩ জন মারা গেছে। এই সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ শতাংশ কমেছে। সংক্রমণের সবচেয়ে খারাপ সময়ে গত বছরের জানুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ৭৩৫ জন মারা গিয়েছিল।

করোনা-বৈরী আবহাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ২৬০০ ফ্ল্যাইট বাতিল : বড়দিন-পরবর্তী করোনা পরিস্থিতি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরগুলোতে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের দেশে দেশে হাজার হাজার ফ্ল্যাইট বাতিল করা হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে লাখো বিমানযাত্রী। বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্ল্যাইট অ্যাওয়ারের বরাত দিয়ে বিবিসি জানাচ্ছে, শনিবার বিশ্বজুড়ে চার হাজার ৪০০ ফ্ল্যাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই রেকর্ড দুই হাজার ৫০০ ফ্ল্যাইট স্থগিত হয়েছে। করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসায় অনেক বিমানকর্মীই এখন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ফলে কর্মী সংকটে পড়ছে এয়ারলাইন্সগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে প্রবল তুষারপাত যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, শিকাগোর ও’হেয়ার এবং মিডওয়ে বিমানবন্দরেই বাতিল করতে হয়েছে সহস একাধিক ফ্ল্যাইট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর