দেশের হাওড় সংরক্ষণে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার পরিবেশমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমিয়ে এনে হাওড়গুলো রক্ষার্থে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এলক্ষ্যে হাওড় এলাকার জনগণকে সংগঠিত করে গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে দলগুলোর সদস্যদের মাধ্যমে হাওড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হাওড় এলাকায় জলজ বন সৃজন করা হয়েছে ও সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বিল-খাল পুনঃখননের মাধ্যমে জলাভূমির অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবল ঢেউয়ের আঘাত থেকে হাওড় এলাকার বসতবাড়ি ও সম্পদ রক্ষার জন্য হাকালুকি হাওড়ে সাবমার্জিবল বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ বরাবর সবুজবেষ্টনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমনে স্থানীয় কৃষকদের সেচ সুবিধায় সৌর শক্তিচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়মূলক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র মূলধন অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, পরিবারকে বিকল্প আয়মূলক কাজের জন্য প্রকল্প হতে সরাসরি উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের ভবিষ্যৎ: তারুণ্যের মুখোমুখি নীতিনির্ধারক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তরুণদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান অতিথির হিসেবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার টাংগুয়ার হাওড় ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওড়কে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

টাংগুয়ার হাওড়কে ২০ জানুয়ারি ২০০০ সালে বাংলাদেশের ২য় এবং পৃথিবীর ১০৩১তম রামসার সাইট হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এ এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন বা আহরণ; সকল প্রকার শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা; ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা বা সংগ্রহ; প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সকল প্রকার কার্যকলাপ; ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট ও পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কাজ; মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন; মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোনো প্রকার কার্যাবলি; নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালীসৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গমন এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণ; যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যে কোনো খনিজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সুষ্ঠুভাবে এ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাসমূহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ জারি করা হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটি এবং গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। হাওড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এসকল কমিটির মাধ্যমে সরকার বাস্তবায়ন করছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৩৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এই তহবিলের অর্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি দপ্তর, সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত সাত বছরে জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুন করা হয়েছে। তিনি সবাইকে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিবেশ সংরক্ষণে সফল হবে সরকার।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খলিকুজ্জামান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন । ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা।

#

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর