শক্তিশালী দৃঢ়চেতা যুব নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহিষ্ণুতা এবং সমাজে সমতা ও সমৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী-দৃঢ়চেতা যুব নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বঙ্গভবন থেকে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি এই আহবান জানান।

বিশ্বব্যাপী যুব সমাজকে একত্রিত করার অন্যতম বৃহৎ প্লাটফরম ‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তরুণরাই আমাদের সাম্প্রতিক উন্নয়নের সম্মুখ সারির লড়াকু শক্তি। এটি আমাদের আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী করে যে, এই তরুণরাই একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যুবকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে তরুণদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, এতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ জনসংখ্যাগত সুবিধায় রয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং জাতির উত্থান অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যুবকরা সবসময়ই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে, ঠিক যেমনটি তারা কোভিড-১৯ মহামারির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় করেছে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, তরুণরা ‘সমতা ও সমৃদ্ধির জন্য সহিষ্ণুতার’ দর্শন আত্মস্থ করবে এবং সমাজ ও মানবতার জন্য অবদান রাখবে।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তরুণরাই অগ্রগতির বাহক এবং তারা এ পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) জাতিসংঘের (ইউএন) পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তঃসরকারি সংস্থা। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্য হয় এবং তখন থেকে সংস্থাটির সাথে একটি শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে।

ঢাকাকে ওআইসি যুব রাজধানী ২০২০ হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ওআইসি এবং ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরামের (আইসিওয়াইএফ) প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, অভিন্ন বিশ্বাস ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওআইসি সদস্য দেশগুলো সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুন্দর আগামী গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দুটি মেগা ইভেন্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় এই অনুষ্ঠানটি ইভেন্টগুলোকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করেছে।

যুবক বয়সে বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণের কথা স্মরণ করে নতুন প্রজন্মকে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক তার বাবার মতোই যুবকদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধুর যুবক বয়সের বিভিন্ন কর্ম ও যৌবনদীপ্ত তেজ এবং বাংলাদেশের এই সোনালি যুবকের ইতিহাস সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার জীবনকালে যা সম্পন্ন করেছেন- মানবজাতির ইতিহাসে খুব অল্প কিছু মানুষই তা করতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলার সময় স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাস ও ইতিহাসের ঘটনাগুলো চলে আসে।’

রাষ্ট্রপ্রধান আরও বলেন, জাতির পিতা সারাটা জীবনই অন্যদের দুঃখ দূর করতে ও মানুষের সহায়তায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিজের সুখ-দুঃখের ব্যাপারে তার কোনো খেয়াল ছিল না। অন্যের দুঃখ তাকেও ব্যথিত করত।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনোই শুধু তার নিজের বা তার পরিবারের কথা চিন্তা করতেন না। বরং যেখানেই তিনি অন্যায়, শোষণ ও নিপীড়ন দেখতেন, সেখানেই প্রতিবাদ করতেন।

আবদুল হামিদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাস্তবিকই মুক্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতি যুবকদের অনুপ্রাণিত করতেন এবং তার নেতৃত্বেই যুবকদের একটি অবিস্মরণীয় প্রজন্ম গড়ে উঠে, যারা এ দেশের মানুষের মুক্তি এবং একটি জাতি বিনির্মাণের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে।

রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বাস করেন, ‘যুবকরাও তা সাহসিকতার সাথে শত্রুর মোকাবিলা করে, তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করে। কারণ আমার অভিজ্ঞতায় আমি সব সময়ই এটা দেখেছি যে- যুবকদের শক্তি সব সময় জয়লাভ করেছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি, রুশ ফেডারেশনের তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের যুব বিষয়ক মন্ত্রী তিমুর সুলেইমানোভ, আইসিওয়াইএফ সভাপতি তাহা আয়হান এবং যুবক ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন।

সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর