গাজীপুর সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্প আছে বাস্তবায়ন নেই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দূর থেকে দেখে মনে হবে শহরের বুকে একখণ্ড পাহাড়। কিন্তু বাস্তবে এটি ময়লার ভাগাড়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কড্ডা এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমতে জমতে গত কয়েক বছরে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। আবর্জনার এ স্তূপ থেকে বাতাসে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল পরিকল্পনা ও প্রকল্প থাকলেও বাস্তবে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না নগরবাসী।সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের হাতিয়াবহ এলাকায় একশ বিঘা জমি কেনা হবে।

প্রকল্পের আওতায় এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হবে জৈব সার, পেট্রল ও বিদ্যুৎ। প্রকল্প চালু হতে কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেনা কেউ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইমাইল এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষেই বিশাল আবর্জনার পাহাড় তৈরি হয়েছে।

৮-১০ বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতেই তৈরি হয়েছে এ পাহাড়। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের সব ময়লা-আবর্জনা গাড়ি দিয়ে এনে ফেলা হচ্ছে ওই স্থানে। পরে ভেকু দিয়ে আবর্জনা উঁচু করে পরিণত করা হয়েছে পাহাড়ে। এখন মাটি থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উঁচু আবর্জনার এই পাহাড়ের। এসব আবর্জনা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। বাতাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।

এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।ময়লা-আবর্জনার কারণে আশপাশের এলাকায় বেড়েছে মাছির উপদ্রব। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চলাচলরত যানবাহনের যাত্রীদেরও অসুবিধায় ফেলছে মাছি। আশপাশের দোকানপাট ও খাবার হোটেলেও মাছি বসে রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে।

দুর্গন্ধের কারণে গত সাত-আট বছর মহাসড়কটিতে যাত্রীদের চলাচল করতে হয় নাক-মুখে রুমাল চেপে।গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। নির্দিষ্ট জায়গা কেনার চেষ্টা চলছে- এমন কথা বলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য দিয়ে জৈব সার, গ্যাস, পেট্রল ও বিদ্যুৎ তৈরিরও কথা জানায় তারা। কিন্তু বাস্তবে এসব কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে সন্ধ্যার পর নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খোলা ভ্যান ও ট্রাকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়।

সকালে ওই বর্জ্য সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যায় কড্ডা এলাকায় ফেলার জন্য। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা এসব বর্জ্যের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে।চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন খোলা ভ্যান ও ট্রাকে ময়লা পরিবহনের ফলে রাস্তার চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।টঙ্গী এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ময়লা-আবর্জনা নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি।

যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এসএম সোহরাব হোসেন   বলেন, এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর, মিরেরবাজার যাওয়ার পথে ও বাইমাইল এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। শিগগির একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য সিটি করপোরেশনের হাতিয়াবহ এলাকায় একশ বিঘা জমি কেনা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে জৈব সার, পেট্রল ও বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে।

এ প্রকল্প চালু হতে কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি পরিদর্শক মদন চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গাজীপুর সিটি থেকে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা বের হচ্ছে।

এর মধ্যে ২ হাজর ৫০০ মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করে। সিটির ৭ ও ৮ নম্বর জোনের ময়লা সংগ্রহ করে স্থানীয় কমিউনিটি তাদের পরিবহন দিয়ে। গাজীপুরে ২২টি সেকেন্ডারি সাবস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি পাকা, বাকি ২০টিই খোলা জায়গায়। এসব খোলা জায়গা থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে কড্ডা এলাকায়। সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে ৩০-৪০ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের প্রায় ৪০০ জন কর্মী ও ৫০টি যানবাহন রয়েছে।

ময়লার ওপর বিদ্যুতের তার থাকায় ভেকু দিয়ে কাজ করার সময় কয়েকবার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে।পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন, সড়কের পাশে আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও সিটি করপোরেশন থেকে সেখানে নিয়মিত ময়লা ফেলে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর