২২ বছর পর আনুষ্ঠানিক সফরে ফ্রান্স যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ ২২ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার আনুষ্ঠানিক সফরে ফ্রান্স যাচ্ছেন। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেষবার আনুষ্ঠানিক সফরে প্যারিস গিয়েছিলেন।

এবারের আনুষ্ঠানিক সফরটি ৯ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পাঁচ দিনের। সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও প্রধান মন্ত্রী জাঁ ক্যাস্টেক্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
এছাড়া ফরাসী সিনেটের প্রেসিডেন্ট জেরার্ড লার্চার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলে, এয়ারবাস ও থ্যালাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীকে তিন জায়গায় গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি নিরাপত্তা খাতে একটি লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

 সফর বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং আমরা আশা করি এই সফরের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
এ ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ সফর কম হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সর্ব্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একাধিক বৈঠক হবে এবং আলোচনার বিষয়বস্তুর গভীরতা অনেক বেশি ও ব্যাপক হবে।’

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও ইউনেস্কোর ৭৫-তম বার্ষিকী উদযাপন এবং সাবেক ফরাসি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্যাসকেল ল্যামির আয়োজনে প্যারিস পিস ফোরাম অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

এছাড়া, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ক্রিয়েটিভ পুরস্কার’ প্রথমবারের মতো দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিয়ে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
ফ্রান্সে ৯ নভেম্বর পৌঁছানোর পরপরই এলিসি প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকের পরে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে, যেটি নিয়ে উভয়পক্ষ কাজ করছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত তালহা। তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং দুই দেশের সর্ব্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে সেটি রয়েছে। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর প্রচুর অ্যাঙ্গেজমেন্টে আছে যা সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে পৌঁছানো এবং এজন্য দরকার দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি। এ দুটি বিষয়ে ফ্রান্স বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে পারে।

রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগ, জলবায়ূ পরিবর্তন, কানেক্টিভিটি, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী ফ্রান্স। এজন্য বিভিন্ন ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করতে চায় দেশটি। ২০২০-এর প্রথমভাগে ওই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারলে ও বিমানবাহিনী বাহিনী প্রধান ফিলিপে লাভিগনে ঢাকা সফর করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত বলেন, এধরনের সফরে সবকিছু নির্ধারিত হয় না তবে একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের গভীরতা অনেক বেশি এবং আমরা এ সফরে ভালো ফলাফল আশা করছি।
১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরার বাংলাদেশ সফরের পর দুদেশের সম্পর্কে বাঁকবদলের সূচনা হয়। তার ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৯ সালে প্যারিসে আনুষ্ঠানিক সফরে যান।

শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে অংশ নিতে শেষবারের মতো প্যারিস সফরে যান। ওই সফরের ফাঁকে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।

দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের হিসেবে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ফ্রান্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ইউরো। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ইউরোর বেশি। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রপ্তানির ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাক। বাকি ১০ শতাংশ চামড়া-চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ ও ওষুধ। ফ্রান্স থেকে গাড়ি ও উড়োজাহাজের যন্ত্রপাতি, পানীয় ও খাদ্য উৎপাদনের রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য ফরাসি বিনিয়োগ হচ্ছে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। এ ছাড়া চট্টগ্রামে কারখানা করেছে ফ্রান্সের খ্যাতনামা জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল। অ্যাভেনটিস, এডেক্স, ডানোন ও ভিওলার মতো ফ্রান্সের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আছে বাংলাদেশে।
২০১২ সাল থেকে ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিতে তৈরি পোশাকশিল্পের সঙ্গে কাজ চলছে। খরচের সাশ্রয় ঘটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একই ভবনে জার্মানির সঙ্গে দূতাবাস চালু করেছে ফ্রান্স। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রথম ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাস চালু হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর