ঢাকা ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরুষেরা আত্মহত্যা বেশি করে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্ক  আর্থিক এবং পারিবারিক যে চাপ, এমনও অনেক সময় মনে হয় যে কিডনি বেইচা হইলেও সংসারডারে টিকাইয়া রাখি।” এই কথাগুলো বলছিলেন পয়ত্রিশ বছরের বেশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরুষ। সপ্তম শ্রেণি থেকে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করছেন তিনি।

বহুদিন ধরে বাবা-মা, দুই বোন, স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দায়িত্বও তাকে বহন করতে হয়। তিনি বলছিলেন, নিজেকে তার প্রায়ই “হালের গরু” বলে মনে হয়।

তিনি বলছেন, “ধরেন আমাদের দেশে মানুষ গরু পালে চারটা কারণে- দুধ, মাংস খাওয়ার জন্য, হাল চাষ করার জন্য, আর বেইচা টাকা পাওয়ার আশায়। আমাদের দেশে ছেলেদেরকেও ওইভাবে পালে যে এরা বড় হইলে কামাই করে খাওয়াবে, দেখাশোনা করবে। কিছু পাওয়ার আশায়, কিছু একটা লাভের আশাতেই বাবা মায়েরা যেন ছেলেদের এইভাবে পালে। যে কারণে ছেলেদের উপরে অনেক চাপ পড়ে।”

এই “চাপের বোঝা” নীরবেই বহন করেন তিনি। চাপ সামাল দেবার জন্য নিজেই খুঁজে নিয়েছেন কিছু পদ্ধতি।

“আমার মানসিক কষ্ট হইলে সেটা আমি কারো কাছে প্রকাশ করি না। মেন্টাল কোন প্রেশার আসলে আমি ওজু করি, দুই রাকাত নামাজ পরি। তারপর একা একা কান্নাকাটি করি। আমি যে কষ্ট পাচ্ছি এটা আমি আজ পর্যন্ত আমার পরিবারের কাউকে বুঝতে দেইনি।”

পুরুষ হয়ে ওঠার সামাজিক শিক্ষা
একজন পুরুষ পরিবারের সবার জন্য অর্থ উপার্জন করবে, সবার দায়িত্ব বহন করবে, জীবনে সফল হবে, সবার জন্য সিদ্ধান্ত নেবে- সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন পুরুষ হয়ে ওঠার এই সামাজিক শিক্ষা জন্ম থেকেই তার ঘাড়ে বিশাল এক বোঝা চাপিয়ে দেয়।

তার কাছ থেকে আশা করা হয় এসব চাপে পুরুষ ভেঙে পড়বে না। পুরুষ দুর্বলতা প্রকাশ করবে না। সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলছেন, কেন বংশ পরম্পরায় পুরুষ এই শিক্ষা বহন করে চলেছে।

তিনি বলছেন, “এটাকে আমরা বলি জেন্ডার রোল। সমাজ নারী ও পুরুষের জন্য শ্রম বিভাজন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে সমাজ তার কাছ থেকে এটা কেন চায়, তার উত্তর জানতে হলে আমাদের অনেক পেছনের দিকে যেতে হবে।”

“মূলত আমরা দেখেছি যে এর সাথে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার একটা সম্পর্ক আছে। এই যে রোল অ্যসাইনমেন্ট, সেটা সমাজ করেছে নানান কারণে। ফেমিনিস্টরা বলবেন সমাজ এটা করেছে পুরুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, অন্যদিকে ফাঙ্কশনালিস্টরা বলবে এটা অর্ডার মেইনটেইন করবার জন্য জরুরী। সেখান থেকেই শুরু।”

“কিন্তু এখনো নানা ফর্মে এই জেন্ডার রোল বহন করে চলেছি। সেটাকে বদলে দেয়া, সাংস্কৃতিক উপাদানকে খুব দ্রুত ফেলে দেয়া সহজ নয়,” বলেন তিনি।

পুরুষ নিজেই কি পিতৃতন্ত্রের শিকার
বিশ্বব্যাপী পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদের মালিকানা এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতা হিসেবে পুরুষের অবস্থান নারীর উপরে। তাই মনে করা হয় পিতৃতন্ত্র পুরুষকে শুধু সুবিধাই দেয়। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী জোবাইদা নাসরিন মনে করেন নিজের তৈরি পিতৃতন্ত্রের বেড়াজালে পুরুষ নিজেই বন্দী হয়ে রয়েছে।

তার ভাষায়, “পুরুষতান্ত্রিকতার ভিক্টিম কিন্তু পুরুষরাও। তাদের উপর একটা বাড়তি চাপ থাকে যে তাকে চাকরি পেতেই হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে, সে যখন বিয়ে করবে তখন স্ত্রীর খরচ দিতে হবে – এটা একটা বিশাল মনস্তাত্ত্বিক চাপ।”

“কিন্তু চাপের মধ্যে থাকলেও কাউকে কিছু বলা যাবে না। বললে তাকে দুর্বল মনে করা হবে। ছোট বেলা থেকে তাকে যেভাবে তৈরি করা হয়, পুরুষের যে কাঠামো সেটা কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতারই ছকে তৈরি। পুরুষরা যে পুরুষতান্ত্রিকতার ভিকটিম, এই বেড়াজাল থেকে সে কিভাবে বের হবে সেই তরিকাটা খুঁজে বের করা জরুরি,” বলেন তিনি।

উপেক্ষিত পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য
কিন্তু এই বেড়াজাল থেকে বের হতে না পারা, এসব বিষয় নিয়ে কথা না বলা, অথবা বলতে না পারার ফল হলো বিশ্বব্যাপী পুরুষরা বেশি আত্মহত্যা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষরা দ্বিগুণ সংখ্যায় আত্মহত্যা করে। ব্যাপক মানসিক চাপে নানা ধরনের শারীরিক অসুখে বেশি ভোগেন পুরুষেরা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষের গড় আয়ু কম।

‘কান পেতে রই’ বাংলাদেশে মানসিক সহায়তা বিষয়ক একটি হেল্পলাইন। বেসরকারি এই সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এবছরের মে মাস পর্যন্ত তাদের হেল্পলাইনে ফোন করে কাউন্সেলিং চেয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ।

তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এই পুরুষদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি কল করেছেন। সংস্থাটির সমন্বয়ক অরুণ দাস বলছেন, বেশিরভাগই তাদের মানসিক কষ্টের উৎস হিসেবে উপার্জনের চাপের কথা উল্লেখ করেন।

“তাদের একটা বড় অংশ সম্পর্ক নিয়ে সমস্যার কথা বলেন এবং মূলত মেয়েরাই এবিষয় নিয়ে বেশি কথা বলেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কাজ বিষয়ক ইস্যু বেশি পাওয়া যায়- কারো হয়ত চাকরি চলে গেছে, অর্থনৈতিক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে মানসিক চাপ- এসব বিষয় নিয়ে পুরুষরা কল করেন বেশি। আর একটা বিষয়ে পুরুষদের কাছ থেকে আমরা কল পাই সেটা হচ্ছে অ্যাডিকশন।”

ব্যর্থতার গ্লানি
অরুণ দাস বলছেন, যথেষ্ট উপার্জন করতে না পারা এবং পরিবারের জন্য দায়িত্ব পালন করতে না পারার জন্য অনেক পুরুষ ব্যর্থতার গ্লানিও বহন করেন, যা তার জন্য একটি বড় মানসিক চাপ।

মানবসম্পদ নিয়ে কাজ করেন মোহাম্মদ ওমর সিদ্দিক। তার ভেতরে কিভাবে ব্যর্থতার ভয় কাজ করে সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, “যেকোনো ভাবেই হোক আমাকে উপার্জন করতে হবে, এই চাপ আমার মধ্যে সবসময় ছিল।”

“যাতে আমি আমার পরিবার, আমার উপর যারা পুরোপুরি এবং আংশিকভাবে নির্ভরশীল তাদেরকে যাতে আমি সোসাইটির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সঠিক সাপোর্ট দিতে পারি। আমার কাছে ফিয়ার অফ ফেইলিউর হলো যথাযথ সাপোর্ট তাদেরকে না দিতে পারা।”

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছেন, বেশিরভাগ সময় পুরুষদের প্রবণতা হচ্ছে ছোটখাটো মানসিক উদ্বেগকে গুরুত্ব না দেয়া।

অনেক বড় ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে সবকিছু ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি হলে তখনই পুরুষরা তাদের শরণাপন্ন হন। তবে তিনি বলছেন, পুরুষ তার ভূমিকা পালন করার জন্য সমাজের যে স্বীকৃতি ও ক্ষমতা পান সে কারণে তিনি নিজেও এসব দায়িত্বকে চাপ মনে করেন না।

তার মতে, “সমাজ তাকে যে দায়িত্ব দেয় সেটাকে সে চাপ হিসেবে দেখে না। কারণ হলো ছোট বেলা থেকেই তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দেয়া হয়েছে।”

“এই যে এত কাজ করছে, টাকা আয় করছে- এটার জন্য সে এক ধরনের পাওয়ার হোল্ড করছে। খুব স্বাভাবিক যে সেই পাওয়ারের জায়গাটা তারা ছাড়তে চাইবেন না। তাই এত দায়িত্বকে সে আর নেগেটিভলি দেখতে পারে না। এটা যে তার প্রতি এক ধরনের অন্যায়ও সে সেটা সেভাবে চিহ্নিতও করতে পারে না,” বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পুরুষেরা আত্মহত্যা বেশি করে

আপডেট টাইম : ০১:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্ক  আর্থিক এবং পারিবারিক যে চাপ, এমনও অনেক সময় মনে হয় যে কিডনি বেইচা হইলেও সংসারডারে টিকাইয়া রাখি।” এই কথাগুলো বলছিলেন পয়ত্রিশ বছরের বেশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরুষ। সপ্তম শ্রেণি থেকে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করছেন তিনি।

বহুদিন ধরে বাবা-মা, দুই বোন, স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দায়িত্বও তাকে বহন করতে হয়। তিনি বলছিলেন, নিজেকে তার প্রায়ই “হালের গরু” বলে মনে হয়।

তিনি বলছেন, “ধরেন আমাদের দেশে মানুষ গরু পালে চারটা কারণে- দুধ, মাংস খাওয়ার জন্য, হাল চাষ করার জন্য, আর বেইচা টাকা পাওয়ার আশায়। আমাদের দেশে ছেলেদেরকেও ওইভাবে পালে যে এরা বড় হইলে কামাই করে খাওয়াবে, দেখাশোনা করবে। কিছু পাওয়ার আশায়, কিছু একটা লাভের আশাতেই বাবা মায়েরা যেন ছেলেদের এইভাবে পালে। যে কারণে ছেলেদের উপরে অনেক চাপ পড়ে।”

এই “চাপের বোঝা” নীরবেই বহন করেন তিনি। চাপ সামাল দেবার জন্য নিজেই খুঁজে নিয়েছেন কিছু পদ্ধতি।

“আমার মানসিক কষ্ট হইলে সেটা আমি কারো কাছে প্রকাশ করি না। মেন্টাল কোন প্রেশার আসলে আমি ওজু করি, দুই রাকাত নামাজ পরি। তারপর একা একা কান্নাকাটি করি। আমি যে কষ্ট পাচ্ছি এটা আমি আজ পর্যন্ত আমার পরিবারের কাউকে বুঝতে দেইনি।”

পুরুষ হয়ে ওঠার সামাজিক শিক্ষা
একজন পুরুষ পরিবারের সবার জন্য অর্থ উপার্জন করবে, সবার দায়িত্ব বহন করবে, জীবনে সফল হবে, সবার জন্য সিদ্ধান্ত নেবে- সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন পুরুষ হয়ে ওঠার এই সামাজিক শিক্ষা জন্ম থেকেই তার ঘাড়ে বিশাল এক বোঝা চাপিয়ে দেয়।

তার কাছ থেকে আশা করা হয় এসব চাপে পুরুষ ভেঙে পড়বে না। পুরুষ দুর্বলতা প্রকাশ করবে না। সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলছেন, কেন বংশ পরম্পরায় পুরুষ এই শিক্ষা বহন করে চলেছে।

তিনি বলছেন, “এটাকে আমরা বলি জেন্ডার রোল। সমাজ নারী ও পুরুষের জন্য শ্রম বিভাজন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে সমাজ তার কাছ থেকে এটা কেন চায়, তার উত্তর জানতে হলে আমাদের অনেক পেছনের দিকে যেতে হবে।”

“মূলত আমরা দেখেছি যে এর সাথে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার একটা সম্পর্ক আছে। এই যে রোল অ্যসাইনমেন্ট, সেটা সমাজ করেছে নানান কারণে। ফেমিনিস্টরা বলবেন সমাজ এটা করেছে পুরুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, অন্যদিকে ফাঙ্কশনালিস্টরা বলবে এটা অর্ডার মেইনটেইন করবার জন্য জরুরী। সেখান থেকেই শুরু।”

“কিন্তু এখনো নানা ফর্মে এই জেন্ডার রোল বহন করে চলেছি। সেটাকে বদলে দেয়া, সাংস্কৃতিক উপাদানকে খুব দ্রুত ফেলে দেয়া সহজ নয়,” বলেন তিনি।

পুরুষ নিজেই কি পিতৃতন্ত্রের শিকার
বিশ্বব্যাপী পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদের মালিকানা এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতা হিসেবে পুরুষের অবস্থান নারীর উপরে। তাই মনে করা হয় পিতৃতন্ত্র পুরুষকে শুধু সুবিধাই দেয়। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী জোবাইদা নাসরিন মনে করেন নিজের তৈরি পিতৃতন্ত্রের বেড়াজালে পুরুষ নিজেই বন্দী হয়ে রয়েছে।

তার ভাষায়, “পুরুষতান্ত্রিকতার ভিক্টিম কিন্তু পুরুষরাও। তাদের উপর একটা বাড়তি চাপ থাকে যে তাকে চাকরি পেতেই হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে, সে যখন বিয়ে করবে তখন স্ত্রীর খরচ দিতে হবে – এটা একটা বিশাল মনস্তাত্ত্বিক চাপ।”

“কিন্তু চাপের মধ্যে থাকলেও কাউকে কিছু বলা যাবে না। বললে তাকে দুর্বল মনে করা হবে। ছোট বেলা থেকে তাকে যেভাবে তৈরি করা হয়, পুরুষের যে কাঠামো সেটা কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতারই ছকে তৈরি। পুরুষরা যে পুরুষতান্ত্রিকতার ভিকটিম, এই বেড়াজাল থেকে সে কিভাবে বের হবে সেই তরিকাটা খুঁজে বের করা জরুরি,” বলেন তিনি।

উপেক্ষিত পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য
কিন্তু এই বেড়াজাল থেকে বের হতে না পারা, এসব বিষয় নিয়ে কথা না বলা, অথবা বলতে না পারার ফল হলো বিশ্বব্যাপী পুরুষরা বেশি আত্মহত্যা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষরা দ্বিগুণ সংখ্যায় আত্মহত্যা করে। ব্যাপক মানসিক চাপে নানা ধরনের শারীরিক অসুখে বেশি ভোগেন পুরুষেরা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষের গড় আয়ু কম।

‘কান পেতে রই’ বাংলাদেশে মানসিক সহায়তা বিষয়ক একটি হেল্পলাইন। বেসরকারি এই সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এবছরের মে মাস পর্যন্ত তাদের হেল্পলাইনে ফোন করে কাউন্সেলিং চেয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ।

তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এই পুরুষদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি কল করেছেন। সংস্থাটির সমন্বয়ক অরুণ দাস বলছেন, বেশিরভাগই তাদের মানসিক কষ্টের উৎস হিসেবে উপার্জনের চাপের কথা উল্লেখ করেন।

“তাদের একটা বড় অংশ সম্পর্ক নিয়ে সমস্যার কথা বলেন এবং মূলত মেয়েরাই এবিষয় নিয়ে বেশি কথা বলেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কাজ বিষয়ক ইস্যু বেশি পাওয়া যায়- কারো হয়ত চাকরি চলে গেছে, অর্থনৈতিক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে মানসিক চাপ- এসব বিষয় নিয়ে পুরুষরা কল করেন বেশি। আর একটা বিষয়ে পুরুষদের কাছ থেকে আমরা কল পাই সেটা হচ্ছে অ্যাডিকশন।”

ব্যর্থতার গ্লানি
অরুণ দাস বলছেন, যথেষ্ট উপার্জন করতে না পারা এবং পরিবারের জন্য দায়িত্ব পালন করতে না পারার জন্য অনেক পুরুষ ব্যর্থতার গ্লানিও বহন করেন, যা তার জন্য একটি বড় মানসিক চাপ।

মানবসম্পদ নিয়ে কাজ করেন মোহাম্মদ ওমর সিদ্দিক। তার ভেতরে কিভাবে ব্যর্থতার ভয় কাজ করে সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, “যেকোনো ভাবেই হোক আমাকে উপার্জন করতে হবে, এই চাপ আমার মধ্যে সবসময় ছিল।”

“যাতে আমি আমার পরিবার, আমার উপর যারা পুরোপুরি এবং আংশিকভাবে নির্ভরশীল তাদেরকে যাতে আমি সোসাইটির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সঠিক সাপোর্ট দিতে পারি। আমার কাছে ফিয়ার অফ ফেইলিউর হলো যথাযথ সাপোর্ট তাদেরকে না দিতে পারা।”

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছেন, বেশিরভাগ সময় পুরুষদের প্রবণতা হচ্ছে ছোটখাটো মানসিক উদ্বেগকে গুরুত্ব না দেয়া।

অনেক বড় ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে সবকিছু ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি হলে তখনই পুরুষরা তাদের শরণাপন্ন হন। তবে তিনি বলছেন, পুরুষ তার ভূমিকা পালন করার জন্য সমাজের যে স্বীকৃতি ও ক্ষমতা পান সে কারণে তিনি নিজেও এসব দায়িত্বকে চাপ মনে করেন না।

তার মতে, “সমাজ তাকে যে দায়িত্ব দেয় সেটাকে সে চাপ হিসেবে দেখে না। কারণ হলো ছোট বেলা থেকেই তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দেয়া হয়েছে।”

“এই যে এত কাজ করছে, টাকা আয় করছে- এটার জন্য সে এক ধরনের পাওয়ার হোল্ড করছে। খুব স্বাভাবিক যে সেই পাওয়ারের জায়গাটা তারা ছাড়তে চাইবেন না। তাই এত দায়িত্বকে সে আর নেগেটিভলি দেখতে পারে না। এটা যে তার প্রতি এক ধরনের অন্যায়ও সে সেটা সেভাবে চিহ্নিতও করতে পারে না,” বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা