হাওর বার্তা ডেস্কঃ তালেবান গতকাল দোহা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এ বছর আগস্টে কাবুল দখল করার পর উদ্ভূত ‘সমস্যা সমাধানের এটাই সেরা উপায়’।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, কাতারের দোহায় সপ্তাহান্তে আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ উদ্বেগ এবং মার্কিন নাগরিক, অন্যান্য বিদেশী নাগরিক এবং আফগানদের নিরাপদ প্রবেশের পাশাপাশি আফগান সমাজের সকল ক্ষেত্রে মেয়ে ও নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণসহ মানবাধিকারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, উভয় পক্ষ ‘সরাসরি আফগান জনগণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী মানবিক সহায়তার বিধান’ নিয়েও আলোচনা করেছে।
প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনাটি স্পষ্ট এবং পেশাদার ছিল যে, তালেবানকে তাদের কাজে বিচার করা হবে, শুধু তাদের কথায় নয়’।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনার প্রথম দিনের পর তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পর তাদের প্রথম মুখোমুখি আলোচনার সময় শাসন ব্যবস্থাকে ‘অস্থিতিশীল’ না করার বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি যোগ করেন, ‘আফগানিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক সবার জন্য ভাল। আফগানিস্তানে বিদ্যমান সরকারকে দুর্বল করার জন্য এমন কিছু করা উচিত নয় যা জনগণের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে’।
রোববার তালেবান দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে তালেবান আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ ছাড় করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে তারা আফগানিস্তানের আকাশসীমার সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
আল জাজিরার খবরে এ বৈঠককে ‘তালেবান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রোববার বৈঠক শেষে তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেন, তারা বিশেষ কোনো দেশকে আনুকূল্য প্রদান ও কোনো দেশের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্কে জড়ানোর নীতি গ্রহণ করবেন না। তালেবান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকিকে উদ্ধৃত করে ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে আফগানিস্তান বর্তমানে যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে সে জন্য দেশটির বিদেশে আটকে পড়া অর্থ ছাড় করা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে তালেবান আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সই হওয়া দোহা চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়ন করার ওপরে জোর দেয়। তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি জানান, আফগানিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে তালেবান প্রতিনিধিরা আগামী দিনগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
গত আগস্ট মাসে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটিকে অর্থসহায়তা স্থগিত করে দেয়।
মার্কিন বিবৃতিটি কম সুনির্দিষ্ট ছিল, শুধুমাত্র এই বলে যে, উভয় পক্ষই ‘সরাসরি আফগান জনগণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী মানবিক সহায়তার বিধান নিয়ে আলোচনা করেছে’।
তালেবান বলেছে, কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনা ‘ভালো হয়েছে’, ওয়াশিংটন তালেবানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির সাথে যুক্ত না করার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার পর আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা মুক্ত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আলোচনা কোনোভাবেই তালেবানদের স্বীকৃতির প্রস্তাবনা নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে ‘মার্কিন প্রতিনিধিদল নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ উদ্বেগ এবং মার্কিন নাগরিক, অন্যান্য বিদেশী নাগরিক এবং আমাদের আফগান অংশীদারদের জন্য নিরাপদ প্রবেশের পাশাপাশি আফগান সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারী ও মেয়েদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ সহ মানবাধিকারের উপর মনোনিবেশ করেছে’।
তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র সুহেল শাহীনও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, আন্দোলনের অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার সময় আশ্বস্ত করেন যে, তালেবানরা এটা দেখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আফগান মাটি অন্য দেশের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য উগ্রপন্থীরা ব্যবহার করে না।
তালেবান শনিবার আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান সক্রিয় ইসলামিক স্টেট গ্রুপকে মোকাবিলা করার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তালেবানের শত্রু আইএস সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে, যার মধ্যে শুক্রবারের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৬ জন সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমান নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন আইএসকে আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হুমকি বলে মনে করে।
শাহীনকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, ইসলামিক স্টেট-এর সহযোগিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করবে কিনা ‘আমরা স্বাধীনভাবে দায়েশ মোকাবেলা করতে সক্ষম। তিনি আইএসএর জন্য একটি আরবি সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করেন’।
বিল রোজিও, ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসি’র সিনিয়র ফেলো, যিনি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে ট্র্যাক করেন, তিনি সম্মত হন যে, তালেবানদের আফগানিস্তানের আইএস-এর সহযোগী, যারা খোরাসান প্রদেশে ইসলামিক স্টেট নামে পরিচিত, বা আইএসকেপি-কে শিকারে এবং ধ্বংস করতে ওয়াশিংটনের সাহায্যের প্রয়োজন নেই। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, এপি ও আল-জাজিরা, ডন অনলাইন।