হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনায় মাঠের দিকে তাকালেই শুধু সবুজ আর সবুজ। এ যেন সবুজের সমারোহ। দোল খাচ্ছে আমন ধানের গাছ। কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের সাফল্যে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। যে কারণে কৃষকের মনে আনন্দ একটু বেশিই।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খুলনায় রোপা আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটাই আশা করছেন কৃষি অধিদফতর। ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা মেট্রোসহ জেলা নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। গেল অর্থবছরের তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, খুলনা মেট্রোসহ জেলার নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে। আবাদের বিপরীতে ৯২ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আবাদের মধ্যে খুলনা জেলার রূপসায় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৯২০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর, তেরখাদায় ৯০৫ হেক্টর, দাকোপে ১৯ হাজার ১৩৫ হেক্টর, কয়রায় ১৪ হাজার ৭২০ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর, দৌলতপুরে ৬৭ হেক্টর ও লবণচরায় ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে খুলনা মেট্রোসহ নয় উপজেলায় ৯২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়। আর আবাদের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর।

কৃষি অধিদফতর খুলনা’র পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে খুলনায় রোপা আমন আবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।’

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে রোপা আমন আবাদে বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠকও করা হচ্ছে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্খিত ফলন আশা করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের পাশে থেকে পাঠপর্যায়ে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পোকা-মাকড়ের কবল থেকে রেহাই পেতে কৃষকরা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করছেন।

তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা আধুনিক জাতের ধানের বীজ বপন করেছে। আধুনিক জাতের এ বীজে ফলন ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, কৃষকদের উঠান বৈঠক করানো হয়। ধানের রোগ-বালাই বিশেষ করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জমিতে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ছয় (৬) মেট্রিক টন আশা করছেন তিনি।

দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কাজ করছেন। পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের আলোর ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে কাঙ্খিত ফলন আশা করছেন তিনি।

রূপসার নৈহাটী ইউপি বাগমারা গ্রামের চাষি মো. ওমর আলী শেখ বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আমনের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরেক চাষি মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, আমনের ফলন এবছর ভালো আশা করা হচ্ছে।

ইলাইপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম শেখ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিলে একই ধরনের মন্তব্য করেন কৃষকরা।