জবি শিক্ষার্থী লেবুর সংগ্রামী জীবন চিরতরে থেমে গেল

মোস্তাকিম ফারুকীঃ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আল-আমিন লেবু নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম থানায়,বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মোস্তফা কামাল।

জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই সে অসুস্থ ছিলো। গতকাল ফেসবুকে একটা পোস্টও করেছে সে। প্রচন্ড (১০৪) জ্বর, ঠান্ডা, কাশি এসবে সে খুব অসুস্থ। প্রথমে বাসাতেই তার স্বাভাবিক চিকিৎসা হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল ভোরে অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। পরে পরীক্ষা করে জানা যায় যে, সে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলো।

বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. পারভীন আক্তার জেমি বলেন, খবরটি শুনে আমি খুবই মর্মাহত। আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হারানো মানে আমার কাছে নিজ সন্তান হারানোর সমতুল্য। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা মৃত্যুর খবরটি শুনেছি। সহকারী প্রক্টর স্যার ঐখানে গিয়েছেন। লাশের গোসলের কাজ শেষ করে বগুড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে তার সহপাঠী আমাদের শিক্ষার্থীরা গিয়েছে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানভীর ইসলাম বলেন, আমরা এক রুমেই থাকতাম। সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতো। কয়েকদিন ধরে বাড়িতে আছি। গতকাল ফেসবুকে আল-আমিন তার জ্বরের কথা লিখে একটি পোস্ট দিয়েছিল। সেই পোস্ট দেখে আমি ফোন দিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলি। ভোরে অবস্থা খারাপ হলে রুমের বাকি সবাই তাকে ডা. আজমল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সে মারা যায়।

তার সহপাঠী সাফায়েত জামিল জানান,
লেবু’র দুই ভাই ভ্যান চালায়। গতকাল সে নাকি তার বাবাকে বলেছে- পারলে কিছু টাকা পাঠাতে। তার কাছে নিজের চিকিৎসা করার টাকা নেই। আজ তার বাবা বাজারে যাবে ঘুটা (গোবর শুখিয়ে তৈরি করা জ্বালানি) বিক্রি করতে। তারপর ছেলেকে টাকা পাঠাবে। বাবাকে টাকা পাঠানোর আর সু্যোগ দিল না।

লেবুর প্রতিবেশি জামাল বলেন, কয়েকদিন আগে নাকি লেবু তার কাছ থেকে অনার্স এর ফরম ফিলাপ এর জন্য টাকা চেয়েছিল। জামাল তাকে টাকা দিতে গেলে বলেছে- ফরম ফিলাপ এর তারিখ পিছিয়েছে, এখন আর লাগবে না। লেবু ছিল আত্মসম্মানবোধে বলিষ্ঠ, হয়তো তার পরিবারের চেহারা বদলে দিতে পারতো। পরিবার হয়তো তার মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল। ঐ পরিবার থেকে একটা ছেলেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো কত বড় সংগ্রাম হতে পারে, কত বড় সাফল্য হতে পারে, ভাবলেই গায়ে শিহরণ দেই।

আল আমিন লেবুর অকাল মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শোক প্রকাশ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ ও তাঁর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায়  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে বলে শোকবার্তায় জানানো হয়।
তার অকাল মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ সকলেই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর