হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের সুস্থতার জন্য কিডনি সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। কারণ কিডনি আমাদের সুস্থ রাখতে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। তাইতো কিডনি ভালো রাখার ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক হওয়া জরুরি। নইলে পরবর্তীতে তা নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। অন্যান্য কারণ যা আপনাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- বয়স্ক হওয়া, কম ওজন, দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা, দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনিতে পাথর এবং স্থূলতা।
আপনি কিডনি সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় ভুগছেন কি না তা বুঝা যাবে সাতটি সাধারণ লক্ষণ দেখেই। চলুন তবে লক্ষণগুলো জেনে নেয়া যাক-
ক্ষুধা কমে যাওয়া
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন অনুসারে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের রোগীদের মধ্যে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যেতে পারে। ক্ষুধা কম লাগা এবং ওজন কমে যাওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
ফোলা চোখ
কিডনির রোগের কারণে পেরিওরবিটাল এডিমা হতে পারে, যে কারণে চোখের চারপাশে ফুলে যেতে পারে। কিডনি থেকে প্রস্রাবে যাওয়ার পরিবর্তে প্রচুর প্রোটিন লিকেজ হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়লে এমনটা হতে পারে। এটি এক চোখে বা দুই চোখেই দেখা দিতে পারে।
ঘুমের সমস্যা
অনিয়মিত ঘুম কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি সাধারণ সমস্যা। যখন কিডনি ঠিকমতো ফিল্টার করে না তখন বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে চলে যাওয়ার পরিবর্তে রক্তে থেকে যায়, যা ঘুমকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
ত্বকের সমস্যা
কিডনির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের সমস্যাও হতে পারে কিডনি রোগের ইঙ্গিত। শুষ্ক এবং খসখসে ত্বক খনিজ এবং হাড়ের রোগের লক্ষণ হতে পারে, যা কিডনি রোগের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে। যখন কিডনি রক্তে খনিজ এবং পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকায়।
পেশীর খিঁচুনি
কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পেশীর খিঁচুনি সাধারণ ঘটনা। শরীরে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রায়ই এমনটা হয়। স্নায়ুর ক্ষতি এবং রক্ত প্রবাহের সমস্যার কারণেও হতে পারে হয়। এটি কিডনি ফাংশন নষ্ট হওয়ার কারণে হতে পারে। শরীরে কম ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা এই সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানায়।
পা ফোলা
পা এবং গোড়ালি ফোলা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। ফোলা কমানোর জন্য লবণ এবং পানি কম গ্রহণ করতে হবে। এর বদলে এমন খাবার খেতে হবে যাবে পানি রয়েছে, যেমন স্যুপ এবং দই। যখন কিডনি অতিরিক্ত তরল অপসারণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি কিছু ক্ষেত্রে পা এবং গোড়ালি ফোলার কারণ হতে পারে।
প্রস্রাবের পরিবর্তন
কিডনি মূত্র তৈরি করে, তাই যখন আপনার কিডনি সঠিকভাবে না করে, তখন প্রস্রাব পরিবর্তিত হতে পারে। প্রস্রাবের ঘন ঘন তাগিদ কিডনি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। আপনি যদি রাতে বেশি প্রস্রাব করেন, এটি কিডনি রোগের লক্ষণও হতে পারে। কিডনির ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এটি ঘটে, যার ফলে প্রস্রাবের তাগিদ বেড়ে যায়।
কিডনি ভালো রাখার সহজ টিপস
যোগ এবং ধ্যানের অভ্যাস করুন।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
আস্ত শস্য, তাজা ফল, শাকসবজি, ডাল এবং শাক-সবজিতে ভরপুর সুষম খাদ্য গ্রহণ করে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
যা এড়িয়ে চলবেন
জাঙ্ক, মশলাযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারকে না বলুন।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করবেন না কারণ এটি কিডনিকে চাপ দিতে পারে।
অ্যালকোহল এবং ধূমপানকে না বলুন। ধূমপান রক্তনালীগুলোকে ধ্বংস করতে পারে, যা কিডনিতে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করতে পারে।
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণ করবেন না কারণ এটি আপনার কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।