নারীর উন্নয়নে মৌলবাদীদের দমিয়ে রাখতে হবে

কতটুকু অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে নারীদের? সম-অধিকার কি আদৌ সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বাধা কোথায়? এ থেকে উত্তরণে আদৌ কোন চেষ্টা হচ্ছে কি না? নাকি কেবল মুখের বুলি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে নারী সম-অধিকারের বিষয়টি।

এমন জিজ্ঞাসা ছিল দেশের চার নাট্যজনের কাছে। তারা এ নিয়ে কথা বলেছেন সৈয়দ নূর-ই-আলমের সঙ্গে।

আবুল হায়াত

‘যুগে যুগে নারীকে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু যেভাবে নারীকে সমাজে উপস্থাপন করা দরকার ছিল সেভাবে করা হয়নি। সমাজ উন্নয়নে সঙ্গী হিসেবে নয় তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনটা আজকের আধুনিক যুগেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজকে যখন সভ্যতার চরম সীমায় আমরা অবস্থান করছি তখন নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

‘নারী তো পণ্য নয়, নারী উন্নয়নের অংশীদার। এটা আমরা এড়িয়ে যাই আমাদের স্বার্থেই। ক্ষুদ্র স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাদের মধ্যেই অনেকে নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে চান না। এটা ঠিক নয়।’ ‘নারী যে সক্ষম এটা আদিকাল থেকে প্রমাণিত। কিন্তু ঠুনকো পৌরুষ দাবিয়ে রাখতে চায় তাদেরকে। বানিয়ে রাখতে চায় অবলা। কিন্তু তাতে লাভ কাদের হচ্ছে? দেশের উন্নয়নই ব্যহত হচ্ছে।’

‘বর্তমানে নারী অংশগ্রহণ বেড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। অংশগ্রহণ বাড়লেও পুরুষরা এখনও তাদের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আসলে আমাদের মানষিকতা পাল্টাতে হবে। নয়তো নারীর যে সামর্থ আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবো না।’

আলী যাকের

‘কেউ তো কাউকে ছাড় দেয় না এখন। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করি তখন অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেই করেছি। তখন নারী-পুরষে ভেদাভেদ আমরা করিনি। নারীকে মোটেও আমরা অবদমিত করিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে ধর্মের নামে নারীকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলে সমাজে নারীদেও অংশগ্রহণ কমে যায়। তারপর থেকে আমরা অন্ধকারে ধাবিত হয়েছি। দীর্ঘদিন এই অবস্থা ছিল। যদিও সাধারণ মানুষ এটা চায়নি। নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রগতিশীলদের আন্দোলন আর প্রগতিবিরোধীদের নারীদের দমিত রাখার চেষ্টা দীর্ঘদিন চলেছিল।’

‘এখন কিন্তু সেই সম্প্রীতির জায়গা তৈরী হয়েছে। নারী এখন আর ঘরের কোনে নেই। তারা বাইরে কাজ করছে। সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী ও পুরুষ দুজনকেই এগিয়ে আসতে হবে। যেটা করতে হবে প্রচুর লেখাপড়া করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক লেখাপড়া। তবেই এই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত নারী-পুরুষদের মধ্যে সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাস্তবায়ন হবে সবার অধিকার।’

আফজাল হোসেন

‘নারী শোভা বর্ধনের বস্তু নয়। প্রবাদ আছে না-পৃথিবীতে যা কিছু কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। আমরা এই কথাটি ভুলে যাই বারবার। পৌরুষ জাহিরের চেষ্টা করি। দীর্ঘদিন আমরা নারীকে শোকেজের শোভাবর্ধনের বস্তুর ঘরে আটকে রেখেছিলাম। এখন চিত্রটা একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে। এখন সবক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ বেড়েছে।’

‘যেটা করতে হবে আমাদের মৌলবাদীদের সামনে আসতে দেয়া যাবে না এসময়। নারী-পুরুষ এখন সমানে সমান অবদান রাখছে দেশের উন্নয়নে। এসময় মৌলবাদীরা সামনে আসলে আমাদের অঙ্গহানি হবে। অর্থ্যাৎ তারা তো চায় নারীকে ভোগের বস্তু করে রাখতে। কিন্তু উন্নয়নে সমান অংশগ্রহণ ধরে রাখতে এই মৌলবাদীদের দমিয়ে রাখতে হবে। আর নারী শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। নারী শিক্ষিত হলে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। সেক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার ধারা অব্যহত থাকবে।’

তারিক আনাম খান

‘নারী আমাদের অংশ। আমরা পুরুষরা যেমন সমাজের জন্য অবদান রাখছি তেমনি নারীকে পাশাপাশি না রাখলে উন্নয়নটা আধাআধিই হয়ে থাকবে। কেননা নারী কিন্তু ঘরের বস্তু নয়। সমাজে তার অবদান রাখার জায়গা করে দিতে হবে। আর এজন্য বিশেষ করে আমাদের মনের দিক থেকে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।’

‘নারী অধিকারের কথা শুধু মুখে না বলে বাস্তবে শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। আর এজন্যই নারীদেও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় মানষিকভাবে সবাইকে তৈরী থাকতে হবে। শহরে নারী অধিকারে অনেকেই সচেতন হলেও গ্রামে রয়েছে এর করুণ চিত্র। অধিকার প্রতিষ্ঠায় গ্রামেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদিও নারী অংশগ্রহণ বাড়ছে তারপরেও সমাজ উন্নয়নে গ্রামের নারীদের সচেতন করতে হবে। এগিয়ে দিতে হবে দেশ উন্নয়ন কাজে। এজন্য তাদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা শিক্ষিত নারী তার অধিকার রক্ষায় সচেতন হতে পারে। শুধু নারী শিক্ষাই নয় পুরুষদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নয়তো নারী সম-অধিকার কেবল মুখেল বুলি ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে থাকবে না।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর