বঙ্গবন্ধুর চেহারা ধারন করা তথাকথিত আরুক মুন্সী ভূইফোর সংগঠনের নেতা

এম শিমুল খানঃ বঙ্গবন্ধুর বেশ ধারন করা তথাকথিত সেই আরুক মুন্সী এখন কয়েকটি ভূইফোর সংগঠনের নেতা।

তার ফেইসবুক আইডিতে এই সকল সংগঠনের পরিচয় লেখা ও বিভিন্ন সময়ে মঞ্চে সংগঠনের নেতা হয়ে বক্তৃতা দেওয়ার ছবি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।
এছাড়া বহুল আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের অবৈধ জয়যাত্রা আইপি টিভিতে বঙ্গবন্ধুর বেশ ধারন করা আরুক মুন্সির একটি স্বাক্ষাৎকার এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বাক্ষাৎকারটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। হেলেনা জাহাঙ্গীর তাকে বঙ্গবন্ধুর আসনে বসাতে কৌশলে প্রশ্ন জিঞ্জাসা করছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাড়ি দাবি করা আরুক মুন্সির আসল বাড়ি নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার চরসাচাইল গ্রামে। তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য মতে এই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
আরুক মুন্সীকে কয়েক বছর আগে কিছু মিডিয়া ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ বানিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। এর পর থেকে সে বঙ্গবন্ধুর বেশ ধরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ছবি তুলে মিডিয়া ফেইসবুক ইউটিউবে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে দাবি করে অসংখ্য ভিডিও বানায়। যার বেশিরভাগই শিবিরের চ্যানেল আছে ।
সেখানে তিনি এমন ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন মনে হতো বঙ্গবন্ধু তিনিই। এই সব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার পক্ষে বিপক্ষে মতামতের অসংখ্য বার ঝড় ওঠে । গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু সেজে প্রতারনা করতে নিষেধ করার পরও তিনি থামে থাকেন নাই।
মুজিব কোর্ট গায়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বেশ ধরে সারা দিন তিনি ব্যাস্ত থাকতেন নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে।
কিছু দিন আগে তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে একটি ষ্টাটাস দেয়। যেখানে দুর্দর্শ শিবির ক্যাডার নুর মোহাম্মাদ সিরাজি ওরেফে লিটনের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নাই বলে তিনি লিখেছিলেন ।
নূর মোহাম্মাদ সিরাজী লিটন, ২০১৩ সালের নাশকতার মাষ্টার মাইন্ড। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া রকি রডুয়ার বিশ্বস্ত লোক। জামাত নেতা সাঈদীর মুক্তির দাবী এবং যুদ্ধ অপরাধী নিজামী পুত্রের সঙ্গে গোপান বৈঠক করে চক্রান্তকারী রকি বড়ুয়া, নুর মোহাম্মাদ সিরাজি ওরফে লিটনের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর বেশ ধারন করা আরুক মুন্সীর সঙ্গে ছিলো গভীর সম্পর্ক। এই আরুক মুন্সিকে চ্যানেলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি বানিয়ে গনভবন, জাতীয় নেতাদের বাসায় , পুলিশ, র‌্যাবরে উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে সাহায্য করেছে সেটা ভেবে দেখার বিষয়। আরুক মুন্সী রিতিমতো লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো? লিটনের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সে আত্মগোপন করলে বিষয়টা ধামা চাপা পড়ে যায়।
আরুক মুন্সির আসল উদ্দেশ্য ছিলো, একটা ষড়যন্ত্রের চেইন অব কমান্ড বঙ্গবন্ধু কন্যার পাশে এদেরকে নিয়ে যেতে সাহায্য করা। রকি বড়ুয়া- সিরাজি ওরফে লিটন আরুকন মুন্সি- নেপথ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি আরুক মুন্সী। জামাত নেতা লিটনের সঙ্গে তার ছবি যাতায়ত ফোন আলাপের রহস্য কি? এই প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে করেছে। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেজে মানুষের কাছে সহজে যেতে পারতো এই আরুক মুন্সি। আসল উদ্দেশ্য ছিলো জামাত নেতা শিবির ক্যাডারদের তথ্য সরবরাহ ও গোপন ষড়যন্ত্র।
বর্তমানে সেও বিভিন্ন ভূইফোর সংগঠন খুলে নেতা বনে গেছে। এই সকল ভূইফোর সংগঠন এবং বঙ্গবন্ধু সেজে প্রতারনা করার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনতে অনেকে অনুরোধ করেছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে নিজে সামান্য একজন ড্রাইভার ছিলো। দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর বেশ ধরে এখন সে অঢেল সম্পদের মালিক। তথাকথিত আরুক মুন্সির বাড়ি গোপালগঞ্জ না হয়েও সে গোপালগঞ্জ বাড়ি বলে পরিচয় দেয়।
তার বাল্য বন্ধুরা সবাই বলছে তাকে কখনো বঙ্গবন্ধুর মতো দেখা যেতো না। সে এই বেশটি বিশেষ কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের চেহারা বঙ্গবন্ধুর মতো করেছে।
তার গ্রামের বাড়িতেও তার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন করে আরুক মুন্সী কে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার পোষ্ট, কমেন্ট দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশের দাবি তিনি বঙ্গবন্ধু সেজে প্রকৃত পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদা করেছেন। বঙ্গবন্ধু একজনই। তার মতো দ্বিতীয় কেউ আসবে না।
সম্প্রতি বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেফতার হওযার পর আরুক মুন্সির সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিলো যেটা তার জয়যাত্রা টেলিভিশনে সাক্ষৎকার দেখলে প্রমান পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধুর বেশ ধরন করা আরুক মুন্সিকে গ্রেফতার করে তার আসল রহস্য বের করা জরুরি বলে অনেকেই মনে করেন।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলেন, এই লোকটাকে অনেক আগে মানা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে কি কি করেছেন সেটা বের করার জন্য আইন সৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করেছে অভিজ্ঞ মহল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর