মহামারী করোনাকে মেনে নিয়েই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে

 ড. গোলসান আরা বেগমঃ বিশ্ববাসি করোনার সাথে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়েছে। সকল উদ্যোগই রসাতলে যাচ্ছে প্রায়।প্রতিদিনই লাশের বহরে লাশ যুক্ত হচ্ছে।বড় অসময়ে স্বর্ণালী পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে বহু কাছের স্বজন। যারা বেঁচে আছে তারাও ভয় অতঙ্কে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। সরকারও ঘর্মাক্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে করোনা সমস্যা মুখাবেলা করতে। প্রায় চার মাস ঘরবন্দি জীবন যাপন করার পর সাধারন মানুষ হাঁপিয়ে ওঠছে। এখন তারা মনে করছে মহামারী করোনাকে মেনে নিয়েই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে।
অসহনীয় হলেও কবিড –১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সন্মত সকল বিধি বিধান মেনে ঘরেই থাকি, নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলি, নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করি।হাত ধু্ই,পরিস্কার পরিছন্ন থাকার চেষ্টা করি। ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর পানি খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে রাখি।নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করি।করোনা জীবনুটি যেন ফুসফুসে ঢোকতে না পারে সে চেষ্টা করি।অনলাইনে,টিভিতে,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রেখে দেশে বিদেশে কোথায় কি হচ্ছে তার খুঁজ খবর নেই।রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমা্ই। করোনা কার জীবন কখন কেড়ে নিলো তার খবর রাখি।নিজেও করোনার ভয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি।প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি কখন করোনার ভেকসিন অাবিস্কার হবে।প্রতিদিন মদজিদের মাইক থেকে মৃ্ত্যু সংবাদ যখন উড়ে আসে ভয়ে কাঁপতে থাকি। লাল নীল বাতি জ্বালিয়ে ভো ভো শব্দের হর্ণ  বাজিয়ে যখন সরকারি এম্বোলেন্স কোন রুগী বা মৃত ব্যক্তিকে নিতে আসে, তখন গলার পানি শুকিয়ে অাসে।
তারপরও দেখছি সারাদিন রাস্তায় গাড়ী,ট্রাক,সকল স্তরের মানুষ  চলাচল করছে।ফেরিওলারা উচ্চ স্বরে হাক ডাক করে তাদের পন্য বিক্রি করছে।নিধারিত সময়ে এসে ঝাড়ুদার রাস্তা পরিস্কার করছে, ময়লার গাড়ীওয়ালা তার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। বাসার সামনের রাস্তায় ফুসকা ব্যবসাও চলছে। নিম্ন শ্রমের মানুষও কাজ করে যাচ্ছে স্বাভাবিক ভাবে।তাদের চোখে করোনা আতঙ্কের কোন চিহ্ন নেই। অামাদের বাসার পেছনে এপার্টমেন্ট নির্মানের কাজ অারো বেশী দ্রুত গতিতে চলেছে। ইট পাথরের শহরে ছাদ বাগানে জুটি বেঁধে পাখি করে উড়াউড়ি।
সবচেয় কষ্টের এবং দুঃখের বিষয় হলো অামরা বিভিন্ন রোগে ভুগছি যারা, যাদের রুটিন মাপিক শরীর চেক অাপ করা দরকার।তারা ডাক্তার পাচ্ছি না। নামী দামী হাসপাতালে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছি।বিদেশে চিকিৎসা সেবা নেবো তাও বন্ধ। ফোনে চিকিৎসা সেবা চালু হলেও, তার উপর আস্থা রাখতে পরছি না।  করোনা চিকিৎসার হযবরল অবস্থার কথা কি অার বলবো? কি যেন কি, দুর্বোধ্য জটিলতায় করোনা রুগি হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।
দূর্নীতির রাহু গ্রাস করে খাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা খাতটিকে। আশা ভরসার জায়গা খোঁজে পাচ্ছি না। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে দূর্নীতিবাজরা সহজে রেহাই পাবে না।সাধারন জনগনের প্রত্যাশাও তাই।
এ দিকে ঘুর্ণিঝড় অাম্ফানকে মুখাবেলা করে গোমড় সোজা করে দাঁড়াতে না দাঁড়তেই ছুটে আসে ভয়াভহ বন্যা। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহ হারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চোখের পলকে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ঘাট,বাজার,বাড়ি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ অান্যান্য স্থায়ী অস্থায়ী স্থাপনা। সরকার সব তাল লয় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রতিদিন দেখছি করোনার পাশাপাশি ভয় অাতঙ্কে ট্রোক করে মারা যাবার সংখ্যাও বাড়ছে। তবে আশার বিষয় হলো — মানুষ তার দূর্ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বুকে সাহস সঞ্চয় করেছে! জন্মের দিনই তো মরণ সাটিফিকেট হাতে নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি। এতো ভয় পেয়ে কি হবে?  যা হওয়ার হবে। খেয়ে পড়ে তো বাঁচতে হবে। মরণ তো প্রতিটি জীবের জন্য অপরিহার্য্য সত্য। তা হলে কিসের ভয়। এ সব অাশ্বাস দিয়ে একে অপরকে অভয় দিচ্ছে। জানি না, নাকের অাগে পিছে ঘুর ঘুর করে ঘুরছে যমদুত কখন নিভিয়ে দিবে জীবন প্রদীপ।
লেখকঃ  কবি, কলামিস্ট,সিনেট সদস্য (জাবি)
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর