কতো যে দোষ

ড. গোলসান আরা বেগমঃ

কতো দোষ হাতে পায়ে আমার
কেন বলবে আমায় ভালো
আমি কি তুলসিপাতা ধোয়া
দুধ সাদা পূর্ণিমার আলো
জ্ঞানের বংশিবাদক
মাজার পূঁজার সাধক।

মানবতার জন্য মানব বন্ধন হলে
মুখে ফেনা তুলি প্রতিবাদী কথা বলে
সত্যের পক্ষে বিচার চাই
অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

তর্জন গর্জন করতে থাকি
সারাক্ষণ চোখ গরম রাখি
কেন দেবে ফুলের মালা এগিয়ে
প্রশংসা করবে বুক ভিজিয়ে।

দোষের কথা শেষ হবে না বলে
ডরাই না কারো দমকে
সাপের মতো ফুস ফুস করি
কেউ মন্দ বললে আমাকে।

আমি নারী চাই না খ্যাতি
মানুষের মতো বাঁচতে চাই
যতই করো দোষি সাব্যস্ত
মানুষ আমি।আমার বিকল্প নাই।

ঠোঁটে মধু নেই।বারুদের ফুলকি
চোখে বরফ গলা আগুন
হাত দু’টো বেশী নড়েচড়ে
কখন যে কার গালে ওঠে পড়ে।

কবিতায় ধর্ষিতার ক্রন্দন
ছোট শিশুর হাসি মাখা ছড়া
গল্পের উচু নীচু কথামালা
টক ঝাল মিস্টি কড়া।

কতো যে দোষ আমার
উচ্চ স্বরে ও সুরে কথা বলি
তর্ক যুদ্ধে হাত পা এগিয়ে রাখি
মুষ্টিবদ্ধ হাত রাখি উপরে তুলে
নারীর কারুকার্যতা যাই ভুলে।

কলম ঘুরিয়ে কাব্য লেখক
মানব সেবায় পথ প্রদর্শক
দেখে স্বপ্ন ঝরা প্রেমের ক্রন্দন
গানে তালে করি সেতু বন্ধন।

মেয়েরা হাড়িপাতিল সাজাবে
চায়ের কাপে তুলবে স্বপ্নের ধুম
ঠোঁটে লিপস্টিক গায়ে সুগন্ধি মেখে
স্বামী সন্তানের গালে দিবে চুম।

মেয়ে মানুষের গুন থাকতে নেই
বুদ্ধি মেধা ঞ্জান থাকতে নেই
মুখে মরিচের ঝাল থাকতে নেই
চেতনায় বোধের গভীরতা থাকতে নেই।

বিড়ালের মতো মিউ মিউ করবে
পায়ের চার পাশে ঘুর ঘুর করবে
ফুলের আঘাতে আজোরে কাঁদবে
আগুনে দাঁড়িয়ে ভালো আছি বলবে।

মেয়েরা জায়নামজে থাকবে বসে
চৌকাঠের আড়ালে পর্দার ওপাশে
করবে শয়ন ঘর ভুড়ি ভোজের কাজ
এই তো চায় প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ।

তা হবে না, মেয়েরা মানবিক হবে
আঙ্গুল খুলে হাত পা নাড়াবে
অধিকার আদায়ে রাখবে যুক্তি
কারাবুদ্ধ নারী চাইবে মুক্তি।

রাজপথ কাঁপিয়ে নারী জাগরনে
ধূলিবালি উড়াই। সমতার গান গাই
রক্তাক্ত শাড়ি ব্লাউজ বুকে তুলে
হাত খুলে ধর্ষকের বিচার চাই।

নারী জাগরনের কথা বললে দোষ
বেগম রোকেয়ার পথ ধরলে দোষ
তসলিমা নাসরিনের কবিতায় দোষ
নারীর যে কতো রখমারী দোষ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর